উত্তাল সাগরে পর্যটকদের গোসল নিষিদ্ধ, ফাঁকা কক্সবাজার সৈকত

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত উত্তাল। শনিবার দুপুরে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টেছবি: প্রথম আলো

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাগরের উপকূল উত্তাল হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঝড়ের কারণে গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের গোসল নিষিদ্ধ করা হয়। আজ শনিবার সকালে কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে পর্যটকেরা সৈকতে নামলেও তাঁদের সমুদ্রের পানিতে নামতে দেওয়া হয়নি।

আজ সকাল থেকে কক্সবাজারের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সকাল থেকেই সূর্যের দেখা নেই। তবে বেলা একটা পর্যন্ত এখনো কোনো ঝড়বৃষ্টি হয়নি। সৈকতে পর্যটকদের সেবায় থাকা কিটকট (চেয়ার-ছাতা), বিচ বাইক, ঘোড়াসহ ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট সরিয়ে ফেলায় পুরো সৈকত এলাকা ফাঁকা দেখাচ্ছে।

আরও পড়ুন
ছবি: আবহাওয়া অধিদপ্তরের সৌজন্যে

সকাল ১০টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো সৈকত ফাঁকা। ফাঁকা সৈকতে হাতমাইকে প্রচারণা চালাচ্ছেন লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা। দূরে ঝাউবাগানের ভেতরে দাঁড়িয়ে কিছু লোক সমুদ্রের উত্তাল অবস্থা দেখছেন।

বেসরকারি লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠান ‘সি সেফ’-এর সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভোর থেকে সৈকতে ভাটা চলছিল। আজ বেলা ১১টা থেকে জোয়ার শুরু হয়, চলে বেলা দুইটা পর্যন্ত। জোয়ারের সময় পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতা বাড়তে পারে। কাল রোববারও বেলা ১১টার পর জোয়ার শুরু হবে। ওই সময় ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন

বেলা একটায় দ্বিতীয় দফায় সৈকতে নেমে দেখা গেছে, সৈকতের কলাতলী থেকে সুগন্ধা, সিগাল, লাবনী পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতের কোথাও লোকজন নেই। বেলা একটার পর দমকা হাওয়ার সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সাগর ক্রমেই উত্তাল হচ্ছে। হালকা বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। জানমালের নিরাপত্তায় পর্যটকসহ কোনো লোকজনকে সমুদ্রের পানিতে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। গোসলে নামতে নিষেধ করে সৈকতের বালুচরে একাধিক লাল নিশানা ওড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে সৈকতে সতর্কতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

আরও পড়ুন
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত উত্তাল। পর্যটকদের গোসলে নামতে না দেওয়ায় সৈকত ফাঁকা। শনিবার দুপুরে ফাঁকা সৈকতে প্রচারণা চালাচ্ছেন লাইফগার্ড কর্মীরা।
ছবি: প্রথম আলো

আজ দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার উপকূল থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া ১৫ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে পারে। রোববার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আরও পড়ুন

আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেলের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার। বর্তমানে অর্ধশতাধিক হোটেলে ১০ হাজারের মতো পর্যটক আছেন। সৈকত উত্তাল থাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে সৈকতে নামতে দেওয়া হচ্ছে না।

আরও পড়ুন