‘জোর করে’ পদত্যাগপত্রে ইউপি চেয়ারম্যানের সই নিলেন স্থানীয়রা

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চেয়ারম্যানের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একটি কাজে অনিয়ম হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয় লোকজন আজ বুধবার আগে থেকে লিখে আনা একটি পদত্যাগপত্রে তাঁর সই নেন।

পদত্যাগপত্রে লেখা হয়েছে, ‘আমি আমার দুর্নীতির কারণে এবং দুর্নীতি জনগণের কাছে প্রমাণিত হওয়ায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।’ এলজিইডির কর্মকর্তারা বলছেন, কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। তারপরও চেয়ারম্যানকে স্থানীয় লোকজন পদত্যাগপত্রে সই করতে বাধ্য করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ-পদবি না থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের আমলে এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধ ছিল তাঁর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসুদেবপুর ইউনিয়নের স্লুইসগেট থেকে বাসুদেবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি রাস্তায় সিমেন্টের ঢালাই করছে এলজিইডি। ৫০ লাখ টাকার এই কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনে করছেন তিন ব্যক্তি। এই কাজে সিমেন্টের অনুপাত কম দেওয়া এবং শিডিউল অনুযায়ী পুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব অভিযোগ তুলে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিকারের জন্য ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের কাছে যান ৫০ থেকে ৬০ জন স্থানীয় ব্যক্তি। তখন চেয়ারম্যান জানান, রাস্তাটির কাজ করছে এলজিইডি। এখানে ইউনিয়ন পরিষদের কিছু করার নেই। এ সময় কেউ কেউ বলে ওঠেন, চেয়ারম্যান এই কাজ থেকে টাকা খেয়েছেন। তাঁরা চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে যায়। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরাতে পারেনি। পরে অনিয়ম-দুর্নীতির দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে চাপ দেওয়া হয় চেয়ারম্যানকে। এ সময় লিখে আনা একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় ইউপি চেয়ারম্যানকে। এই পদত্যাগপত্র নিয়ে তাঁরা ইউপি কার্যালয়ে তালা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দিতে যান।

বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ইউপি কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘এভাবে তো জোর করে পদত্যাগ হয় না। আমি স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হয়েছি। পদত্যাগ করিনি। এখানে রাস্তাটাস্তা কিছু না। এলাকার একটা পক্ষ আমাকে সরাতে চাইছে। তা না হলে কাজ এলজিইডির, আর আমাকে চাপ দেওয়া হয়?’

এদিকে বাসুদেবপুর ইউনিয়নের স্লুইসগেট থেকে বাসুদেবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত রাস্তায় সিমেন্টের ঢালাইয়ের কাজে অনিয়ম হচ্ছে না বলে দাবি এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মুনছুর রহমানের। তাঁর ভাষ্য, কাজে অনিয়ম হচ্ছে বলে সকালে স্থানীয় লোকজন তাঁদের কাজে বাধা দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে ডাকতে যান। কিন্তু চেয়ারম্যান কাজে বাধা দিতে আসেননি। এই ক্ষোভে তাঁরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লেগেছেন। মুনছুর বলেন, আসলে কাজের মান নিয়ে কোনো সমস্যা নয়। তাঁদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমস্যা আছে। তাঁরা চেয়ারম্যানকে সরাতে চান। এর অজুহাত খুঁজছিলেন।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, এখন তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেবেন। যতক্ষণ না এলাকাবাসী লিখিত দেবেন যে কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখা হবে।

এ বিষয়ে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি ফরমালি পদত্যাগপত্র পাইনি। স্থানীয় লোকজন এসেছিলেন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে আমি তাঁদের লিখিত দিতে বলেছি। লিখিত দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’