চট্টগ্রাম নগরের ফাঁকা দুই আসনে কারা হচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী

চট্টগ্রামের নগরের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটিতে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এই দুটি আসনে কে প্রার্থী হচ্ছেন, এখন সেটিই আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে। দুটি আসনে অন্তত ছয়জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন।

নগরের সব আসনে বিএনপি প্রার্থী চূড়ান্ত করতে না পারলেও প্রায় আট মাস আগে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। এই প্রার্থীরা দলের প্রতীকে ভোট দিতে প্রচার-প্রচারণা করে আসছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসংযোগ করছেন। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণার মাঠে নেই জাতীয় পার্টি।

চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলা ও ৩৪টি থানা এলাকা নিয়ে সংসদীয় আসন রয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে ১৬টি থানা এলাকা এবং বোয়ালখালী উপজেলা নিয়ে নগরের চারটি সংসদীয় আসন।

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও, বোয়ালখালী ও পাঁচলাইশ আংশিক)

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও, বোয়ালখালী ও পাঁচলাইশ আংশিক) আসনে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহকে দল থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এই আসনে নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মোস্তাক আহমেদ খান মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবু সুফিয়ান ওই আসন থেকে নির্বাচন করেন।

৫ নভেম্বর নগরের পাঁচলাইশের চালিতাতলী এলাকায় জনসংযোগে এরশাদ উল্লাহসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর পাশে থাকা সরোয়ার হোসেন নামের এক ‘সন্ত্রাসী’ ঘটনাস্থলে মারা যান। যদিও পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, সন্ত্রাসী দলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।

মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন না। ৫ নভেম্বর নগরের পাঁচলাইশের চালিতাতলী এলাকায় জনসংযোগে এরশাদ উল্লাহসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর পাশে থাকা সরোয়ার হোসেন নামের এক ‘সন্ত্রাসী’ ঘটনাস্থলে মারা যান। যদিও পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, সন্ত্রাসী দলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে।

আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বোয়ালখালী উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আবু নাছের। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে রয়েছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জুবাইরুল হাসান। ইসলামী আন্দোলন নগরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুরুল আলমকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি, বাকলিয়া)

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৩ নভেম্বর এই আসনে নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের নাম ঘোষণা করেন। তবে সঙ্গে সঙ্গে আবার তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এই আসনে সুফিয়ান ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুল আলম, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁরা সবাই নিয়মিত এলাকায় উঠান বৈঠক, গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

চারদিকে ধানের শীষের জোয়ার শুরু হয়েছে। ভোট দেওয়ার জন্য জনগণ উন্মুখ হয়ে আছে।
—আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি।

নগর জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম ফজলুল হক এই আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া এনসিপি থেকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ, চট্টগ্রাম নগর যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফ মঈনুদ্দীন ও মীর শোয়াইব এবং সদস্য সাদিয়া আফরিন মনোনয়নপ্রত্যাশী।

গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মারুফ এই আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন নগরের আইনবিষয়ক সম্পাদক আবদুস শুক্কুরও প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে এ আসনটিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখেন রাজনৈতিক দলগুলো। কারণ, ১৯৯১ সাল থেকে সব কটি নির্বাচনে এই আসন থেকে যে দলের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন, ওই দলই সরকার গঠন করেছে। এ ছাড়া এই আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সরকারের মন্ত্রিসভায়ও স্থান পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর, খুলশী)

এই আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে দল থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চারদিকে ধানের শীষের জোয়ার শুরু হয়েছে। ভোট দেওয়ার জন্য জনগণ উন্মুখ হয়ে আছে।’

এই আসনে নগর জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রয়েছেন। এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সাগুফতা বুশরা মিশমা ও নগর এনসিপির সদস্য আজগর আলী মনোনয়নপ্রত্যাশী। গণসংহতি আন্দোলন থেকে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন অপূর্ব নাথ। ইসলামী আন্দোলন নগরের সভাপতি মোহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা)

নগরের এই আসনেও বিএনপির কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। এই আসনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরু নিয়মিত উঠান বৈঠক, সমাবেশ ও জনসংযোগ করে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এসেছেন ইসরাফিলের বাবা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। জানতে চাইলে ইসরাফিল খসরু প্রথম আলোকে বলেন, ‘১২ বছর ধরে এলাকায় কাজ করছি। বাকিটা দলের নীতিনির্ধারকদের বিষয়।’

এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর শফিউল আলম। এনসিপি থেকে নগর যুগ্ম সমন্বয়কারী কাজী এরফানুল হক ও বন্দর থানার সংগঠক নাইমুর হাসান মনোনয়নপ্রত্যাশী। ইসলামী আন্দোলন নগরের সহসভাপতি মোহাম্মদ নুর উদ্দিন প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। গণসংহতি আন্দোলন থেকে সৈয়দ সালাহ উদ্দিন প্রার্থী রয়েছেন।