সিলেটে তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

সিলেটে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুস সালামকে গ্রেপ্তারের পর আজ মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে র‍্যাব-৯ছবি: প্রথম আলো

সিলেটে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীকে (১৮) দুই দফায় আড়াই মাস আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে হওয়া মামলার প্রধান আসামি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুস সালামকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটে র‍্যাবের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৯–এর অধিনায়ক মো. মোমিনুল হক।

আবদুস সালাম সিলেট নগরের লালদিঘিরপাড় এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে এবং সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সংগঠন থেকে গত রোববার রাতে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব–৯-এর অধিনায়ক মো. মোমিনুল হক বলেন, ভালো কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে এক তরুণীকে একাধিকবার আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ আছে আবদুস সালামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন ওই তরুণীর মা। মামলার পর থেকে র‍্যাব অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে তৎপরতা চালাচ্ছিল। গতকাল রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোলাপগঞ্জে অভিযান চালিয়ে প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, এ ঘটনায় অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তার আবদুস সালামকে কোতোয়ালি থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি থেকে প্রায় আড়াই মাস ওই তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে ভুক্তভোগী তরুণীর মা বাদী হয়ে ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুস সালাম ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য আবদুল মনাফ (৩৮) ও রেখা বেগম নামের এক নারীর নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী তরুণী নগরের শেখঘাটের একটি কারখানায় কাজ করতেন এবং শহরের একটি এলাকায় বসবাস করতেন। অভিযুক্ত রেখা বেগম তাঁর প্রতিবেশী। ভুক্তভোগীকে শহরের বাসায় রেখে গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন স্বজনেরা। এ সময় ওই তরুণীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুস সালামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রেখা। ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘সালাম নেতা টাইপের লোক, বিপদে-আপদে উপকারে আসবে।’ ৭ জানুয়ারি রেখার মাধ্যমে তরুণীকে নিজের বাসায় নিয়ে যান সালাম। এরপর টানা ২২ দিন সালাম তাঁকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন।

এজাহারে বলা হয়, এর মধ্যে ওই তরুণীর মা-বাবা গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসেন। বাসায় মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যেতে চাইলে প্রতিবেশী রেখা বেগম তাঁদের সালামের কাছে নিয়ে যান। সালাম তাঁদের জিডি করতে নিষেধ করে নিজেই খুঁজে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এর দুই দিন পর তরুণীর মা-বাবা আবার সালামের কাছে গেলে তিনি বিকেলের দিকে ফিরিয়ে আনার কথা জানান।

ওই দিন বিকেলে তরুণীকে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেন সালাম। এ সময় ওই তরুণীর স্বজনদের তিনি জানান, ওই তরুণী এক প্রবাসীর বাসায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই উদ্ধার করেছেন। স্বজনেরা প্রবাসীর নাম জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে তরুণী মা-বাবাকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনাটি জানালে সালাম তাঁদের হত্যার হুমকি দেন এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।

এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার তিন দিন পর আবার কাজে যাচ্ছিলেন তরুণী। তখন সালাম বিয়ে ও ভালো জায়গায় কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন। কথামতো সালামের সঙ্গে আবার দেখা করেন ওই তরুণী। তিনি তরুণীকে কিছু টাকা দিয়ে নগরের কাজীরবাজার এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় পাঠান। সেখান থেকে অভিযুক্ত মনাফ তাঁকে হবিগঞ্জের বাহুবলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান।

সেখানে আটকে রেখে সালাম-মনাফসহ একাধিক ব্যক্তি ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। একপর্যায়ে ওই তরুণী কৌশলে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিলেটে পালিয়ে আসেন। পরে স্বজনেরা তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেন। চিকিৎসা শেষে তরুণীর মা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।