আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আবারও হতাশ

ঠাকুরগাঁও জেলার মানচিত্র

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে (পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল) ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ইমদাদুল হক। কিন্তু সেবার তিনি হেরে যান। এরপর দল থেকে আরও দুই দফা মনোনয়ন পেয়েও তাঁকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে হয়। এবার নির্বাচনে ইমদাদুল হককে আবারও মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবার আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ, দলের সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে ইমদাদুল হককে। এ সিদ্ধান্তে আবারও দলীয় সংসদ সদস্য না পাওয়ায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।

এ সম্পর্কে রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সইদুল হক বলেন, ‘আসনটি দলকে বঞ্চিত করে আবারও ছেড়ে দেওয়া হলো। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। আমাদের মধ্য থেকে একজনকে মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূলে যে হতাশা ছিল, তা কেটে গিয়েছিল। কিন্তু এবারও একই ঘটনা ঘটল। এখন দলের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল।’

তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যা ভালো মনে করেছেন, সেটাই করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভিত্তি বেশ মজবুত। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ১৯৯১ সালে মোকলেসুর রহমান ও ১৯৯৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহসভাপতি ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইমদাদুল হক দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে ইমদাদুল হক দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে

জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের কাছে হেরে যান। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে ইমদাদুল হক দল থেকে মনোনয়ন পেলেও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার কারণে তাঁকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আসনটি ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হন ইয়াসিন আলী।

কিন্তু ইমদাদুল হক ওই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমানের কাছে তিনি পরাজিত হন। জাহিদুর রহমানের ছেড়ে দেওয়া আসনে মনোনয়নের আবেদন করেন ইমদাদুল হক। কিন্তু সে সময় আসনটি ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় ইমদাদুল হক মনোনয়ন বঞ্চিত হন।

এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে ইমদাদুল হক ছাড়াও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, সহসভাপতি ও পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিনা জাহান, রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সইদুল হক, রানীশংকৈল উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম, রানীশংকৈল পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান, রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রবিউল ইসলাম দলের কাছে আবেদন করেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড ইমদাদুল হককে দলের মনোনয়ন দেয়। এতে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে আশা দেখা দেয়। কিন্তু জোটগতভাবে নির্বাচনের জন্য গতকাল রোববার ঠাকুরগাঁও-৩ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এ আসনে ইমদাদুল হকের বদলে জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদকে জোটের প্রার্থী করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

পীরগঞ্জ শহরের যুবলীগ কর্মী আবদুল জব্বার বলেন, ‘আমরা এবার আশায় বুক বেঁধেছিলাম, নিজের দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য বানাব। কিন্তু এবারও হতাশ হলাম।’

রানীশংকৈল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, ‘আসনটি আবারও শরিক দলকে ছেড়ে দেওয়ায় আমরা হতাশ। নেতা-কর্মীরা দলের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়ছেন।’