পান চাষে কৃষকের দিনবদল
একসময় ইউনিয়নজুড়ে দেখা যেত ধানখেত, এখন সেখানে চোখে পড়ে পানের বরজ। যাঁরা একসময় শ্রমিকের কাজ করতেন, তাঁরাও বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত জায়গায় পানের চাষ করছেন। পান চাষ করে এলাকার অনেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। পানের বরজে ঘেরা এই ইউনিয়নের নাম পাঁচগাছি। এর অবস্থান রংপুরের পীরগঞ্জ এলাকায়।
কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর আগেও পীরগঞ্জ উপজেলায় পানের চাষ হতো না। ধান ও সবজির আবাদ হতো বেশি। পান চাষ যে লাভজনক, তা বুঝতে পারেন আমোদপুর গ্রামের কৃষক শাহ আলম, ফরিদুল ইসলাম ও একরামুল হক। তাঁদের সাফল্য দেখে এগিয়ে আসেন আরও অনেকে। আগে যাঁরা জমিতে ধানসহ অন্য ফসলের চাষ করতেন, তাঁরা পান চাষে ঝুঁকে পড়েন।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, পীরগঞ্জে ৩৫০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। যাঁদের কৃষিজমি নেই, তাঁরাও বসতবাড়ির পাশে ও আঙিনায় পানের চাষ করছেন। পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, আট-নয় বছর ধরে এ ইউনিয়নের অনেক কৃষক ধানের আবাদ কমিয়ে দিয়ে পানের চাষ করছেন। এতে লাভ বেশি। ব্যবসায়ীরা গ্রামে ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে এসব পান কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে পান ঘিরে। দিন দিন বাড়ছে এলাকায় পানের চাষ।
নাসিরাবাদ গ্রামের পানচাষি বিমল সাধু বলেন, ধান কাটার পর আবার নতুন করে চাষের জন্য জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে নানা কাজ করতে হয়। এতে যেমন খরচ হয়, তেমন লাভ পাওয়া যায় না। অন্যদিকে পান একবার চাষ করলে ১০-১২ বছর টানা বিক্রি করা যায়। এর মধ্যে শুধু খেত পরিচর্যার খরচ করতে হয়।
গত সোমবার পাঁচগাছি ইউনিয়ন গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ পানের বরজ, কেউ খেত থেকে পান তুলছেন, কেউ করছেন খেতের পরিচর্যা। কথা হয় জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামের পানচাষি তহুরা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পান হামার কষ্ট দূর করছে। এখন গোয়ালে গরু আছে, ডুলিভরা ধান, আর খেতভরা পান আছে। সবমিলে মোর সুখের সংসার।’
এনায়েতপুর গ্রামে প্রবেশের মুখে রিপন হোসেনের বাড়ি। বাড়ির পাশে লাগানো পানখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। রিপন হোসেন বলেন, ‘এক বছর আগোত ২০ শতক জমিত ৫০ হাজার টাকা খরচ করি পানের গাছ নাগাছুন। চার মাস পর থাকি পান তুলি বেচাওছু। এ্যালা পান বেচে প্রত্যেক বছরে খরচ বাদে ৮০ হাজার টাকা আয় করুছুন।’
পানেয়া গ্রামের ভবেশ চন্দ্র বলেন, ধানের চেয়ে পান চাষে লাভ বেশি। বছরে ৪০ শতক জমিতে দুবার ধান চাষ করে খরচ বাদে ১৬-১৮ হাজার টাকা আয় করা যায়। কিন্তু ৪০ শতক জমিতে পান চাষ করতে খরচ হয় ৮৫-৯০ হাজার টাকা। তিন মাস পরপর পান তোলা হয়। পান তোলার পর সেচ, সার ও বরজ মেরামত বাবদ ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। বাজারে দাম থাকলে বছরে ওই ৪০ শতক জমির পান বিক্রি করে খরচ বাদে ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। প্রতিটি পানগাছ থেকে ১০-১২ বছর পর্যন্ত পান পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, পান অর্থকরী ফসল। এটি চাষ করা বেশ লাভজনক। এই ফসল চাষের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের উৎসাহ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।