নারায়ণগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী ত্বকী হত্যা মামলার তদন্তের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবার শুরু করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১১। তাদের প্রতি দ্রুত আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪৬ মাস উপলক্ষে আয়োজিত মোমশিখা প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি এ আহ্বান জানান। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট প্রতি মাসের ৮ তারিখে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, সিপিবির শহর সভাপতি আবদুল হাই, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর, সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহেদ কায়েস, বাসদের জেলা সংগঠক এস এম কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।
রফিউর রাব্বি তাঁর বক্তব্যে বলেন, শেখ হাসিনার দুর্বৃত্ত লালনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ত্বকী হত্যা। শামীম ওসমানের মতো দুর্বৃত্ত, গডফাদারদের রক্ষা করতে সাড়ে ১১ বছর তিনি ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিলেন। নারায়ণগঞ্জে খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজের মাধ্যমে মাফিয়াদের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তারা মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল। আজ তারা পালিয়ে গেছে, কিন্তু আবার নতুন দখলদার তৈরি হচ্ছে। শামীম ওসমানের সন্ত্রাসীরা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে ঢুকে যাচ্ছে। ওসমান পরিবার ও তাদের ক্যাডারদের দখলে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নতুন দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে। নতুন নতুন চাঁদাবাজ, গডফাদার তৈরি হচ্ছে। সরকারকে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রফিউর রাব্বি বলেন, ৫ আগস্টের পর তদন্তকারী সংস্থা র্যাব ত্বকী হত্যার বন্ধ থাকা তদন্তের কাজ আবার শুরু করেছে। কিন্তু সময় অনেক হয়েছে। অতি দ্রুত অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিতে হবে। হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, ক্যাডার শাহ নিজামসহ হত্যায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কেউ যেন আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেড়িয়ে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক বিচার নিশ্চিত করে তাঁদের দেশে এনে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
শামীম ওসমান ত্বকী হত্যার সঙ্গে জড়িত বলেই ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন মাহবুবুর রহমান। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘এখন কেন বিচার আটকে আছে? বাধা কোথায়?’ তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের উদ্দেশে বলেন, ‘যদি অভিযোগপত্র দিতে না পারেন, তবে পদত্যাগ করুন। ত্বকী হত্যার বিচার করতেই হবে। আমরা বিচার চাইব, তা আদায় করে নেব।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজের দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু তিন মাস পর শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলে বিচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সেই অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি।