রোজগারের জন্য গিয়ে পুড়ে অঙ্গার, ফেনীর দুই প্রবাসীর বাড়িতে মাতম

কাতারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ও মীর হোসেন
ছবি- সংগৃহীত।

পরিবারের ভাগ্যোন্নয়নের আশায় পাঁচ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের দোহায় একটি গাড়ির গ্যারেজে চাকরি নিয়ে দেশ ছাড়েন মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান (৩৫)। বাড়িতে বৃদ্ধ মা–বাবা, স্ত্রী, আট মাস বয়সী মেয়ে, ছোট ভাই ও দুই বোনের বড় পরিবার। তাঁর পাঠানো টাকায় চলে সংসার। বিদেশ-বিভূঁয়ে থাকা এমন রোজগেরে মানুষটি পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাবেন, তা কিছুতেই মানতে পারছে না মাহফুজুরের পরিবার।

গত রোববার রাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের দোহার ফিরোজ আবদুল আজিজ এলাকায় আগুনে পুড়ে মারা যান ছয় শ্রমিক। তাঁদের চারজনই বাংলাদেশি। বাংলাদেশি চার শ্রমিকের মধ্যে মাহফুজুর রহমানসহ দুজন আবার ফেনী জেলার বাসিন্দা। মাহফুজুর ফেনী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বারাহিপুর এলাকার মো. মাঈন উদ্দিন ভূঞা ওরফে মানু মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় ফেনীর অপর প্রবাসী হলেন নিহত মীর হোসেন (৩৮)। তাঁর বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নে।

ফেনী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাহার উদ্দিন বলেন, কাতারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান তাঁর চাচাতো ভাই। প্রায় পাঁচ বছর আগে পরিবারের ভাগ্যোন্নয়নের আশায় কাতার গিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে একবার দেশে এসে ঘুরে যান। তখন বিয়েও করেন। বাড়িতে তাঁর মা–বাবা, ছোট ভাই, স্ত্রী ও ৯ মাস বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। মৃত্যুর তিন থেকে চার দিন আগেও বাড়িতে ফোন করে সবার সঙ্গেই কথা বলেছেন মাহফুজুর। সবাইকে তাঁর মেয়েকে দেখে রাখতে বলেছেন। ৯ মাস বয়সী মেয়ে কোনো দিন বাবার মুখ দেখেনি আর কোনো দিন দেখবেও না।

জানা গেছে, রোববার রাতে কাতারের দোহার ফিরোজ আবদুল আজিজ এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডের সময় একটি ভবনে কাজ করছিলেন নিহত ছয় শ্রমিক।

ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান গতকাল সোমবার রাতের দিকে কাতারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত দুজনের নাম ঠিকানা ও পরিচয় নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশি অপর দুজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহত অপর দুজন পাকিস্তানি নাগরিক বলে জানা গেছে।

নিহত মীর হোসেন ফরহাদের (৩৮) চাচাতো ভাই তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ফরহাদ গত কয়েক বছর আগে কাতার যান পরিবারের ভাগ্যোন্নয়নের আশায়। সেখানেই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লাশ দেশে আনার চেষ্টা করা হবে।

দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ কাতারের দোহায় গাড়ির গ্যারেজে আগুনে মীর হোসেন মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘তাঁর কাগজপত্রে কিছু জটিলতা আছে বলে শুনেছি। তবুও তাঁর লাশ দেশে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।’