বাগমারায় স্নাতকের শিক্ষার্থীকে ‘চিকিৎসক’ বানিয়ে চোখের অস্ত্রোপচারের চেষ্টা, বাবা-ছেলের দণ্ড

রাজশাহীর বাগমারায় অনুমোদনহীন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভবানীগঞ্জ কলেজ মোড়েছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় অনুমোদনহীন একটি চক্ষু হাসপাতাল চালিয়ে পাঁচ রোগীর চোখে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এক পল্লিচিকিৎসক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করা তাঁর ছেলে। ঠিক এমন সময় সেখানে হাজির হয়ে অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে ওই রোগীদের উদ্ধার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাবাকে অর্থদণ্ড ও ছেলেকে দেওয়া হয় কারাদণ্ড।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভবানীগঞ্জ কলেজ মোড়ে আল মক্কা-মদিনা চক্ষু হাসপাতাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। নিজেকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পরিচয় দিতেন উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন (৪৩)। এ ছাড়া তাঁর ছেলে ফায়সাল আহমেদ (২১) নিবন্ধিত চক্ষুবিশেষজ্ঞ পরিচয়ে হাসপাতালটি পরিচালনা করে আসছিলেন। গতকাল রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে হেলাল উদ্দিনকে এক লাখ টাকার অর্থদণ্ড এবং ফায়সালকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, হেলাল উদ্দিন একজন পল্লিচিকিৎসক এবং তাঁর ছেলে ফায়সাল উচ্চমাধ্যমিক পাস করে স্নাতকের শিক্ষার্থী।

ভ্রাম্যমাণ আদালত ও স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক মাস আগে ভবানীগঞ্জ কলেজ মোড়ে ‘আল মক্কা-মদিনা চক্ষু হাসপাতাল’ নামে পাঁচ শয্যার একটি বেসরকারি হাসপাতাল চালু করেন হেলাল উদ্দিন। তবে হাসপাতাল পরিচালনার কোনো নিবন্ধন বা সরকারি অনুমতি ছিল না। ফায়সালের মাধ্যমেই অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছিল।

গতকাল বিকেলে ওই হাসপাতালে পাঁচ রোগীকে চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য জড়ো করা হয়। অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তাঁদের চোখে ড্রপও দেওয়া হয়েছিল। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় অভিযান চালান ইউএনও মাহবুবুল ইসলাম। এ সময় অস্ত্রোপচার কক্ষেই পাওয়া যায় ওই পাঁচ রোগীকে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইলে কেউ কোনো নথি দেখাতে পারেননি।

অভিযানের সময় ফায়সাল আহমেদ নিজেকে চক্ষুবিশেষজ্ঞ পরিচয় দেন। তাঁর দেওয়া সনদ ও নিবন্ধন নম্বর অনলাইনে যাচাই করে দেখা যায়, সেটি আরেকজন চিকিৎসকের। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ফায়সাল নিজেকে ভুয়া চিকিৎসক বলে স্বীকার করেন। হাসপাতালের কোনো বৈধ নথি, চিকিৎসার মান, পরিবেশ কিংবা চিকিৎসক না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। আদালত ফায়সালকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং তাঁর বাবা হেলাল উদ্দিনকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড (অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড) দেন। অর্থ পরিশোধের পর হেলাল উদ্দিন মুক্তি পান। অন্যদিকে ফায়সালকে রাতেই কারাগারে পাঠানো হয়।

ইউএনও মাহবুবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটিতে একজন ঝাড়ুদার ছাড়া আর কোনো চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মী পাওয়া যায়নি। অন্য চিকিৎসকের নিবন্ধন ব্যবহার করে অবৈধভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছিল। অস্ত্রোপচারের জন্য আনা পাঁচ রোগীকেও উদ্ধার করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।