সিলেটে সংরক্ষিত বনে বৈশাখী মেলার প্রস্তুতি, নাম এল স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার

সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকার বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রবেশমুখে বৈশাখী মেলার জন্য বাঁশ দিয়ে স্টলের কাঠামো করা হয়েছে। বুধবার সকালেছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকায় বন বিভাগের সংরক্ষিত বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে বৈশাখী মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বনের ভেতরে প্রবেশমুখে বাঁশ দিয়ে খুঁটি করে মেলার দোকান বরাদ্দের জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

তবে এ ব্যাপারে বন বিভাগের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. হুমায়ুন কবির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টিলাগড় ইকোপার্কটি সংরক্ষিত বন। সেখানে বন বিভাগের ১১২ একর জায়গায় সীমানাপ্রাচীর দেওয়া আছে। ওই সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে কোনো ধরনের কোনো মেলা আয়োজন করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেলা আয়োজনের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সাইদুল এনাম চৌধুরী মেলা আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত। তিনি তাঁর ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি ‘লাহিন চৌধুরী’ থেকে বৈশাখী মেলার জন্য স্টল বরাদ্দ চলছে—এমন প্রচার চালাচ্ছেন। টিলাগড় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র তিনিসহ আরও কয়েকজন মিলে রক্ষণাবেক্ষণ ও টিকিট বেচাকেনার জন্য ইজারা নিয়েছেন। জালাল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত ২৮ মার্চ বন বিভাগের চুক্তিটি হয়। প্রতিষ্ঠানটি এক বছরের জন্য বন বিভাগকে ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ইজারা দিয়েছে। মেলার জন্য বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রবেশমুখে বাঁশ দিয়ে খুঁটি গেড়ে ১৩টি স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। বুধবার সকালেও বাঁশের খুঁটিগুলো ওই স্থানেই ছিল।

মেলার জন্য বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রবেশমুখে বাঁশ দিয়ে খুঁটি গেড়ে ১৩টি স্টল নির্মাণ করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

অভিযোগের বিষয়ে সাইদুল এনাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় কোনো পরিচয়ে নয়, তিনি ও কয়েকজন মিলে বৈধভাবে ইজারা নিয়েছেন। তাঁদের কোনো লাইসেন্স না থাকায় অন্য আরেকজনের সঙ্গে যৌথভাবে ইজারা নিয়েছেন। সেখানে বৈশাখী মেলার কোনো আয়োজন করা হচ্ছিল না দাবি করে তিনি বলেন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের ক্যানটিনটি নোংরা এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। সে জন্য ঈদে দর্শনার্থীদের সেখানো কোনো সেবা দেওয়া যায়নি। সামনে বৈশাখে যাতে দর্শনার্থীদের খাবার ও পানীয় সরবরাহ করা যায়, সে চিন্তা থেকে প্রবেশমুখে কয়েকটি দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। দর্শনার্থীদের সেবার জন্যই এমনটি করেছিলেন। কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে সেটি আর করবেন না। ফেসবুকে বৈশাখী মেলার স্টল বরাদ্দের প্রচারণার প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, দর্শনার্থী ও স্টল নিতে ইচ্ছুকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এমন প্রচারণা চালিয়েছেন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় টিলাগড় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে চিড়িয়াখানার আদলে বিভিন্ন পশুপাখি খাঁচায় রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীরা ছুটির দিনে সেখানে বেড়াতে যান। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে ৬২টি প্রাণী নিয়ে ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর সংরক্ষণ কেন্দ্রটি চালু করা হয়। পরে বিভিন্ন সময় আরও ৪০টির বেশি প্রাণী আনা হয়। প্রাণী অধিকার সংস্থাগুলো কয়েকটি প্রাণী উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। সিলেটের টিলাগড় এলাকার মোট ৪৫ দশমিক ৩৪ হেক্টর বনকে ২০০৬ সালে টিলাগড় ইকোপার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকার পর বন বিভাগ ২০১২ সালে সেখানে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।

জালাল এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মো. শাহজালাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জানেন না যে সেখানে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বন বিভাগের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি সেখানে লোক পাঠিয়ে মেলার আয়োজন করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। বাঁশের খুঁটিগুলো খুলে নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি ও মঈনুল নামের একজন বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটি ইজারা নিয়েছেন। কিন্তু মঈনুলের সঙ্গে অন্য কেউ আছেন কি না, সেটি তিনি জানেন না। মেলার আয়োজন কারা করেছেন, সেটিও তিনি জানেন না বলে দাবি করলেন। সাইদুল এনাম চৌধুরীকে চেনেন না দাবি করে তিনি বলেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।