‘আমাদের মনের যত্ন নিতে হবে’

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মো. বখতিয়ার। রোববার দুপুরে গাজীপুর ছায়াবিথী সোসাইটি উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে
ছবি: প্রথম আলো

আশ্বিনেও চৈত্রের গরম। এর মধ্যে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হতে থাকেন গাজীপুর শহরের দক্ষিণ ছায়াবীথি সোসাইটি উচ্চবিদ্যালয়ের হলরুমে। সেখানে আজ রোববার বেলা ১১টায় শুরু হয় মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালা। বক্তারা মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব ও মনের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের আয়োজনে এবং ইউনিমেড ইউনিহেলথ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুরে কর্মশালাটি পরিচালনায় সহযোগিতা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার গাজীপুরের বন্ধুরা। কর্মশালায় অংশ নেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।

কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর খাজা বদরুদ্দোজা মডার্ন হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ মো. বখতিয়ার। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি) জোবায়ের মিয়া, ঢাকা সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের কনসালট্যান্ট (সাইকোথেরাপিস্ট) মাহমুদা মুহসিনা (বুশরা), ছায়াবীথি সোসাইটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খন্দকার মাসুদুর রহমান ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের সহকারী বিক্রয় প্রতিনিধি মো. আবদুল্লাহ।

মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরে চিকিৎসক জোবায়ের মিয়া বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে বিষণ্নতার জন্য আত্মহত্যার হার অনেক বেড়ে গেছে। তাই আমাদের মনের যত্ন নিতে হবে। শিশু-কিশোরসহ প্রাপ্তবয়স্ক অনেকেই মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যই যখন সব সুখের মূল, তখন সেই স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সুন্দর জীবন গড়ে তোলা সম্ভব নয়।’

স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক ও মানসিক—উভয় প্রকার স্বাস্থ্যকেই বোঝায় বলে মন্তব্য করেন জোবায়ের। তিনি বলেন, ‘শরীরের ব্যাপারে আমরা যতটা গুরুত্ব দিই, ঠিক মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও ততটাই গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের আশপাশের বন্ধু, যাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সহায়তার প্রয়োজন আছে, তাঁদেরকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। মা-বাবা ও অভিভাবকের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করতে হবে। একই সঙ্গে কখনো বেশি প্রয়োজন হলে চিকিৎসকেরও পরামর্শ নিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা যাবে না।’

মাদকের কুফল তুলে ধরে মো. বখতিয়ার বলেন, ‘মাদক গ্রহণের ফলে তাঁদের টাকাপয়সার চাহিদা বেড়ে যায়, টাকাপয়সা না পেলে তাঁরা অবাধ্য হয়ে যান। সামাজিক বন্ধন আস্তে আস্তে ভেঙে যায়। ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। যিনি ভালো কথা বলেন, তাঁকে এড়িয়ে যান, ক্ষণিকের আনন্দ পাওয়ার জন্য মাদকাসক্ত বন্ধুকে আপন মনে করেন। আত্মিক সম্পর্ক তাঁদের ছেড়ে দেয়। ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা থাকে না। তাই মাদক থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। যে মুখে আমরা মা ডাকি, সেই মুখে মাদক গ্রহণ করব না।’

অনুষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও কথা বলেন সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের সাইকোথেরাপিস্ট কনসালট্যান্ট মাহমুদা মুহসিনা। ছায়াবীথি সোসাইটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খন্দকার মাসুদুর রহমান বলেন, মানুষের জীবনে অনেক বাধা বা প্রতিকূলতার সৃষ্টি হবে; কিন্তু এতে মন খারাপ করার কিছু নেই বা হতাশাগ্রস্ত হওয়া যাবে না। সব প্রতিকূলতা ফেলে এগিয়ে গেলেই সফলতা আসবে।

গাজীপুর বন্ধুসভার সহসভাপতি উম্মে ইশতিলার উপস্থাপনায় কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদ রানা, সাংবাদিক রেজাউল করিম, গাজীপুর বন্ধুসভার সভাপতি নাঈমা সুলতানা, বন্ধুসভার সদস্য সজীব চৌধুরী, আবিদা সুলতানা, সিয়াম আহমেদ, আঁখি আলম প্রমুখ।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া সদস্যদের মধ্যে সনদ বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।