ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সম্মেলন কাল, সভাপতি পদে মির্জা ফয়সলের প্রতিদ্বন্দ্বী নেই

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের বড় মাঠেছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরপর সম্মেলনের জন্য কয়েক দফা তারিখ ঘোষণা করেও সম্মেলন করতে পারেনি দলটি। সর্বশেষ সম্মেলনের সাত বছর আট মাস পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার গোপন ব্যালটে নেতৃত্ব বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত হওয়ায় সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের তৎপরতা বেড়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের প্রয়োজন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

গত ১৮ আগস্ট জেলা বিএনপির এক সভায় ৮ সেপ্টেম্বর সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সভায় সম্মেলনে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না বলেও জানানো হয়। তবে পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে দলটি। গোপন ব্যালটে নেতৃত্ব বাছাইয়ে ৩০ আগস্ট তফসিল ঘোষণা করেন জেলা সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বদিউজ্জামান চৌধুরী। তফসিল অনুযায়ী গত বুধবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। বিএনপির গঠনতন্ত্রে জেলা কমিটি ১৫১ জনের অনূর্ধ্ব হলেও ওই দিন কেবল ৫টি পদের বিপরীতে ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন এককভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মির্জা ফয়সল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছোট ভাই। সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, আল মামুন আলম, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী ও পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মুরাদ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হাসান মো. আবদুল হান্নান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাফরুল্লাহ ও সত্যজিৎ কুমার কুন্ডু। আর প্রচার সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির সমাজসেবা–বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ওরফে সোহাগ।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। গত বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের বড় মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। শহর ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারে ছেয়ে গেছে। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের বড় মাঠে চলছে প্রস্তুতি। অবশ্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করলেও সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীরা ছাড়া বাকি ছয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে কেবল সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীরা মাঠে থাকলেন। শেষ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নেতা–কর্মীরা।

তবে জেলা বিএনপির সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বদিউজ্জামান চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন। উদ্বোধন করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিশেষ অতিথি হিসেবে সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক ও আমিনুল ইসলাম উপস্থিত থাকবেন।

বিএনপির নেতা–কর্মীরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় ঠাকুরগাঁওয়ে শতাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছিল বিএনপির সাত হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে। কারাভোগ করতে হয়েছে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে দলের কর্মসূচি থেকে অনেক নেতা-কর্মী নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। গত বছরের ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার পর সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এখন সেই কার্যালয় ঘিরে দিন–রাত চলে নেতা-কর্মীদের আড্ডা। আর সেই আড্ডার মূল আলোচনা হলো জেলা সম্মেলন।

দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সর্বশেষ ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনে তৈমুর রহমানকে সভাপতি ও মির্জা ফয়সল আমিনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দুই বছর পরপর সম্মেলন আয়োজনের কথা থাকলেও কয়েক দফা তারিখ ঘোষণা করেও জেলা সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি দলটি। এ অবস্থায় গত বছরের ৩ মার্চ তৈমুর রহমান মারা যান।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন
ছবি: প্রথম আলো

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভা ও উপজেলার সম্মেলন শেষ করে জেলা সম্মেলন আয়োজনের কথা ছিল। তবে বাস্তবতার কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে, জেলা সম্মেলন শেষ করে যেসব কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ রয়েছে, তা দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা।

গোপন ব্যালটে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফয়সল বলেন, ‘ভোটের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু দলের নেতারা কেবল ৫টি পদে ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আমার ধারণা, স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর)–নির্ভর। তাঁকে কেন্দ্র করেই এখানকার (ঠাকুরগাঁওয়ের) বিএনপির রাজনীতি পরিচালিত হয়। এই নির্ভরতার কারণে নেতা-কর্মীরা দলের নেতৃত্ব কারা দেবেন, তা মহাসচিবের ওপরই ছেড়ে দেন। আমার ধারণা, নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটা কেমন হবে, তা হাউসের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। হাউস সিদ্ধান্ত নিলে ভোট না–ও হতে পারে। তবে আমরা চাই গোপন ব্যালটে নেতৃত্ব নির্বাচন হোক।’