১৮ বছরেও কমিটি হয়নি, হতাশ নেতা–কর্মীরা

শরীয়তপুর জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৫ সালে। এরপর আর সম্মেলন হয়নি। নতুন কমিটিও গঠন করা হয়নি।

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

২০০৫ সালে সর্বশেষ শরীয়তপুর জেলা যুবলীগের সম্মেলন করা হয়েছিল। দীর্ঘ ১৮ বছরেও আর সম্মেলন বা নতুন কমিটি করা হয়নি। সংগঠনটির শীর্ষ পদে থাকা অনেক নেতা আওয়ামী লীগের কমিটিতে চলে গেছেন। কেউ দেশের বাইরে ও কেউ মারা গেছেন। দীর্ঘ সময়ে নতুন কমিটি গঠিত না হওয়ায় নেতা–কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। নতুন কমিটি না হওয়ায় দলীয় কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

শরীয়তপুর জেলা যুবলীগ সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে শরীয়তপুর জেলা যুবলীগের সম্মেলন করা হয়। ওই সম্মেলনে এম এম জাহাঙ্গীরকে সভাপতি, গোলাম মোস্তফাকে সহসভাপতি ও নুহুন মাদবরকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সভাপতি এম এম জাহাঙ্গীর ২০১৯ সালে পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ওই কমিটির পাঁচজন দেশের বাইরে চলে গেছেন। আর মারা গেছেন দুজন।

শরীয়তপুর সদর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। আরেক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। যুবলীগের কমিটিতে থাকা শীর্ষ নেতারা সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেনের অনুসারী। তাই বি এম মোজাম্মেল হকের অনুসারীরা কোণঠাসা অবস্থায় আছেন।

জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করতে ও জেলা সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিতে ২০২১ সালের  ৫ অক্টোবর জেলা শহরে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা চালাকালে নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা (ইকবাল হোসেন ও বি এম মোজাম্মেল হকের অনুসারীরা) সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তখন অনেক নেতা-কর্মী আহত হন। অবরুদ্ধ করা হয় কেন্দ্রীয় নেতাদের। এর পর আর জেলা যুবলীগের কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। তবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শরীয়তপুর জেলা যুবলীগের ব্যানারে গত ২২ জুলাই তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ নামের একটি অনুষ্ঠান করা হয়েছে। তাতে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ বা নতুন কমিটি গঠন নিয়ে ওই সভায় কোনো কথা বলেননি।

যুবলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি হওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় তৎপর হয়েছিলেন শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান, পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাচ্চু ব্যাপারী, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বিল্লাল হোসেন দিপু, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক পাহাড়, সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার ও শরীয়তপুর সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি তারিকুল ইসলাম।

সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য তৎপর ছিলেন সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান অনু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ কোতোয়াল, পাভেল মুন্সি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম মাদবর। কমিটি গঠন ও সম্মেলন করা নিয়ে ওই নেতারা এখন নীরব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভাপতির পদপ্রত্যাশী সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নানা আন্দোলন-সংগ্রাম করে জেলে গিয়েছি। মামলা–হামলার শিকার হয়েছি। বয়সের কারণে ছাত্রলীগ করা ছেড়ে দিয়েছি। এখন যুবলীগের রাজনীতি করব। কিন্তু দেড় যুগ আগে কমিটি হয়েছে। এখনো তাঁরাই যুবলীগ করছেন। নতুনদের যুবলীগ করার সুযোগ দিচ্ছেন না।’

সাধারণ সম্পাদক হতে চান এমন এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুবলীগের জেলা কমিটি ৭১ সদস্যবিশিষ্ট। আর কমিটি হয় তিন বছরের জন্য। ১৮ বছরে ৬টি সম্মেলন হতো। ছয়বার নেতৃত্বের পরিবর্তন আসতে পারত। কয়েক প্রজন্মের যুবকেরা যুবলীগকে নেতৃত্ব দিতে পারত। কিন্তু স্থানীয়ভাবে বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা করা হয়নি। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষমতায় থাকার কারণে তা বুঝতে পারছি না। আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হলে সাংগঠনিক দুর্বলতা বোঝা যেত।’

শরীয়তপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুহুন মাদবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুবলীগের জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৫ বছর আগে। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার তাগিদ কেন্দ্রীয় কমিটিকে দিয়েছি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে বর্ধিত সভা করা হয়েছিল। তখন কিছু সমস্যার কারণে সম্মেলন করা যায়নি। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কেন্দ্রীয় নেতারা এখন সম্মেলন করতে চান না। নির্বাচনের পর সম্মেলন হবে।’