তিন চাকায় দাঁড়িয়ে সারোয়ারের ‘বার্গার প্লাজা’

তিন চাকার গাড়িতে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো সারোয়ার হোসেনের বার্গার প্লাজা। বুধবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বীরউজুলী বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

সন্ধ্যায় ব্যস্ত বিপণিবিতানের সামনে আলোঝলমলে একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে দাঁড়িয়ে বার্গার খাচ্ছেন লোকজন। বার্গারগুলো আসছে আলোঝলমলে সেই গাড়ি থেকেই। দেখতে গাড়ির মতো মনে হলেও এটি আসলে একটি ভ্রাম্যমাণ বার্গারের দোকান। নাম ‘বার্গার প্লাজা’।

গাজীপুরের কাপাসিয়ার বীরউজুলী বাজারে সারোয়ার হোসেন (২৩) নামে এক তরুণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এটি। সাত মাস ধরে এই গাড়িতে করে বার্গার বিক্রি করছেন তিনি। এমন দোকান ওই এলাকায় প্রথম।

বুধবার সন্ধ্যায় ওই দোকানে গিয়ে দেখা যায়, গাড়িটির পেছনের অংশ বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। ভেতরে তিনজন লোক অনায়াস বসে কাজ করতে পারেন। গাড়িটির একটি অংশ খাবার সরবরাহ করার জন্য। ভেতরের একটি অংশে বার্গার তৈরি করা হয়, অন্য অংশে চলে বার্গার তৈরির বিভিন্ন কাঁচামাল প্রক্রিয়াকরণের কাজ। খাবার তৈরি থেকে শুরু করে সরবরাহ করা পর্যন্ত মানা হয় স্বাস্থ্যবিধি। পচনশীল গ্লাভস দেওয়া হয় বার্গারের সঙ্গে। আর খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি ঝুড়ি।

সন্ধ্যায় বার্গার প্লাজার সামনে গিয়ে ফরমায়েশ দিতেই হাস্যোজ্জ্বল এক তরুণ এগিয়ে এলেন। জানতে চাইলেন কোন বার্গারটি লাগবে। এই তরুণই হলেন সারোয়ার হোসেন। তিনি বার্গার প্লাজার উদ্যোক্তা। সারোয়ার হোসেন উপজেলার টোক ইউনিয়নের নয়াসাঙ্গুন গ্রামের মো. তমিজ উদ্দিনের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। তাঁর এই উদ্যোগে সময় দিচ্ছেন তাঁর বাবা ও ছোট ভাই। প্রায় দেড় বছর একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি নিজে উদ্যোক্তা হয়েছেন। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের আয় দিয়েই এখন তাঁদের পুরো পরিবারের খরচ চলে।

দেখতে গাড়ির মতো মনে হলেও এটি আসলে একটি ভ্রাম্যমাণ বার্গারের দোকান। নাম ‘বার্গার প্লাজা’
ছবি: প্রথম আলো

সারোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আইডিয়া তাঁর নিজের হলেও পুরো বিনিয়োগ আর উৎসাহের পেছনে আছেন বাবা। স্থানীয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন তিনি। তবে নানা কারণে পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি। বেশ কয়েক বছর সারোয়ার বাড়িতেই ছিলেন। একসময় চিন্তা করলেন, বসে না থেকে কিছু একটা করা দরকার। চলে গেলেন নারায়ণগঞ্জের একটি ফুডকোর্টে। সেখানে দেড় বছর চাকরি করে বার্গার ও স্যান্ডউইচ তৈরি করা শিখেছেন। এরপর নিজ এলাকায় এসে বার্গার বিক্রির চিন্তা মাথায় আসে। দোকানটি কীভাবে অন্যান্য দোকানের চেয়ে একটু ব্যতিক্রমভাবে শুরু করা যায়, তা নিয়ে বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। ঢাকার রাস্তায় তিন চাকার গাড়িকে বিশেষ পদ্ধতিতে খাবারের দোকানে রূপান্তর করার বিষয়টি তাঁর চোখে পড়ে। তিনি একটি ওয়ার্কশপে যোগাযোগ করে তাঁর পরিকল্পনার কথা জানান। প্রায় দুই লাখ টাকা খরচে তৈরি হয়ে যায় দৃষ্টিনন্দন তিন চাকার বার্গারের দোকান। দোকানটির নাম দেন বার্গার প্লাজা।

বুধবার সন্ধ্যায় বার্গার প্লাজায় খেতে এসেছিলেন সামিউল ইসলাম নামের এক তরুণ। তিনি বলেন, মফস্বল এলাকায় বার্গারের দোকান একেবারেই নতুন ধারণা। সারোয়ারের তৈরি বার্গারের স্বাদ কিছুটা ভিন্ন। সে জন্য এখানে এসেছে তাঁরা।

পার্শ্ববর্তী উপজেলা শ্রীপুর থেকে বার্গার খেতে এসেছেন নাবিল আহমেদ। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারোয়ারের ব্যতিক্রমী বার্গারের দোকানের রিভিউ দেখে এখানে এসেছেন তিনি। অনেকেই বেশ সুনাম করেছেন। তাই ২০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে বন্ধুকে নিয়ে বাইকে চড়ে বার্গার খেতে এসেছেন তিনি।

সারোয়ার বলেন, মানুষের কাছে ব্যতিক্রম সবকিছুই পছন্দের। বার্গারের দোকানটি তিন চাকার ওপর হওয়ায় এটি মানুষকে আকর্ষণ করে। এ জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই বার্গার খেতে আসছেন। তিনি বলেন, যে কেউ খুব অল্প বিনিয়োগে এমন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হতে পারেন। ভালো খাবার খাওয়াতে পারলে সফল উদ্যোক্তা হওয়া সময়ের ব্যাপার।