‘তোকে এখানে মার্ডার করলে তোর কোন বাপ বাঁচাতে আসবে’

কালীগঞ্জ উপজেলা নেসকো কার্যালয়ে ভাঙচুর ও ডিজিটাল হাজিরা মেশিন নষ্ট করেন দেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এ সময় কর্মচারীদেও মারধর করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নেসকোর কালীগঞ্জ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র রায়সহ (৪০) কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদের ডাকে স্থানীয় তুষভান্ডার রেলস্টেশন এলাকার অন্বেষা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর কার্যালয়ে দেখা করতে না যাওয়ায় এই ঘটনা ঘটানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র রায়। রাকিবুজ্জামান আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ কবির প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রকৌশলী রকি চন্দ্র রায় বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁদের কার্যালয়ের পিচরেট মিটার পাঠক শাহিনুর ইসলাম তাঁকে জানান, রাকিব (মন্ত্রিপুত্র) তাঁকে সন্ধ্যার পর অন্বেষা ক্লাবে ডেকেছেন। তিনি তাঁকে (শাহিনুর) বলেন, বাসায় তাঁর দুই স্বজন অসুস্থ, তিনি এখন যেতে পারবেন না। গতকাল বিকেলে তিনি প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে থাকতে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল তাঁকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘রাকিব ভাই আপনাকে অন্বেষা ক্লাবে সন্ধ্যার সময় ডেকেছেন।’ তিনি তাঁকে বলেন, তিনি রংপুরে আছেন, ফিরতে রাত হবে। সোমবার সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে তিনি রাকিবকে ফোন দেন। কিন্তু তিনি ধরেননি।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা নুরুন্নবী (বাঁয়ে) ও শরিফুল ইসলাম
ছবি সংগৃহীত

রকি চন্দ্র রায় বলেন, ‘মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল, সহসভাপতি নুরুন্নবীসহ ৮ থেকে ১০ জন আমার রুমে আসেন। আমি কেন রাকিব ডাকার পরও যাইনি, সেটি তাঁরা জানতে চান। আমি বললাম, এটা অফিসের ডেকোরামের মধ্যে পড়ে না যে মন্ত্রীর ছেলে ডাকলে আমাকে যেতে হবে। তখন শরিফুল ইসলাম আর নুরুন্নবীসহ তাঁরা আমাকে বলেন, “তুই জানিস রাকিব কে? তোকে এখানে মার্ডার করলে তোর কোন বাপ বাঁচাতে আসবে, তুই কাউকে পাত্তা দিস না।” পরে তাঁরা আমার অফিসের আলমারি ভাঙচুর করেন, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ভেঙে ফেলেন এবং আমার উপসহকারী প্রকৌশলীদের চড়থাপ্পড় দিয়ে বের করে দেন। এ সময় কর্মচারীদেরও মারধর করা হয়।’

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। রাকিবুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘আমার সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র রায়ের সম্পর্ক ভালো। ফোনেও কথা হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামসহ অন্যরা আমার নাম ভাঙিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ছাত্রলীগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ জামান প্রথম আলোকে বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে কালীগঞ্জের নেসকো নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তদন্ত করে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।