২৫ বছর পর কেন ক্ষমতা বদল

গারো পাহাড়ঘেঁষা ময়মনসিংহ-১ আসন। এ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৫২ জন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ভোটার গারো সম্প্রদায়ের।

জু‌য়েল আরেং ও মাহমুদুল হক

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী গারো–অধ্যুষিত এলাকা ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসন। এ আসনে ২৫ বছর ধরেই গারো সম্প্রদায়ের লোক সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পর নেতৃত্ব কেন হাতছাড়া হলো এই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর, এ নিয়ে জনমনে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, গারো পাহাড়ঘেঁষা ময়মনসিংহ-১ আসন। দুই উপজেলার মোট ভোটার ৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৫২ জন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ভোটার গারো সম্প্রদায়ের।

গারো সম্প্রদায়ের মানুষ প্রমোদ মানকিন ১৯৯১, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রথমে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ও পরে তিনি সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১১ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তখন উপনির্বাচনে তাঁর ছেলে জুয়েল আরেং (৩৩) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য।

এরপর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জুয়েল আরেং আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জুয়েল আরেং স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে সদ্য পদত্যাগী মাহমুদুল হকের কাছে ১৯ হাজার ৬৭৯ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন। এ আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হকের প্রাপ্ত ভোট ৯৩ হাজার ৫৩১ ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জুয়েল আরেংয়ের প্রাপ্ত ভোট ৭৩ হাজার ৮৫২। জুয়েল আরেংয়ের এমন পরাজয় অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিতই ছিল।

জুয়ের আরেংয়ের এমন পরাজয় নিয়ে মানুষের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মধ্যে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় দলের অনেক নেতা–কর্মী নৌকার বিপরীতে গিয়ে কাজ করেছেন। এ ছাড়া গত ইউপি নির্বাচনে জুয়েল আরেংয়ের বিরুদ্ধে নিজের পছন্দের নেতাদের জনপ্রতিনিধি করা, হালুয়াঘাট উপজেলার চেয়ে ধোবাউড়া উপজেলায় উন্নয়নমূলক কাজ কম হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় হয়। এ ছাড়া দুই উপজেলায় জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের তেমন মূল্যায়ন না করা এবং তাঁদের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবও নৌকার পরাজয়ের উল্লেখযোগ্য কারণ।

এদিকে প্রকাশ্যে নেতা–কর্মীরা নৌকার পক্ষে অবস্থান নিলেও অনেকই গোপনে গোপনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় নৌকার পরাজয় হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তরুণ ভোটার বলেন, জুয়ের আরেংয়ের নিজের কিছু ভুল ছিল। তিনি সবাইকে খুব সহজে বিশ্বাস করেছেন। অনেকেই বুকে নৌকার ব্যাজ পরেছেন, কিন্তু ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকায় সিল না দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা সংক্ষুব্ধ ছিলেন। অনেকেই প্রকাশ্যে নৌকার সমর্থক দাবি করলেও তলেতলে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। তবে সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি নিয়েও জনশ্রুতি ছিল।

ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডেবিট রানা চিরান বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই সাম্প্রদায়িক বিষয় নিয়ে লড়াই করতে হয়েছে—গারো প্রার্থীকে ভোট দেওয়া যাবে না। মূলত এসব কারণেই নৌকা প্রতীকের পরাজয় হয়েছে।