ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ট্রলারডুবি, নিহত ২

সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ট্রলার ডুবে এক কিশোর ও তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সীতারামপুর-মনতলা সেতুর কাছে
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মালামাল ও যাত্রীবোঝাই একটি ট্রলারডুবিতে দুই যাত্রীর প্রাণ গেছে। আজ বুধবার বেলা তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের তিতাস নদের সীতারামপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় কেউ নিখোঁজ নেই। জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযানে যান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

নিহতের মধ্যে একজন তরুণ ও অপরজন কিশোরী। তরুণের নাম হাফেজ মো. মাহমুদ উল্লাহ (২৫)। তিনি নরসিংদীর মির্জাচর গ্রামের হাফেজ ফারুক মিয়ার ছেলে। কিশোরীর নাম রাফসি চৌধুরী (১৫)। রাত্রি নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের মালয়েশিয়াপ্রবাসী প্রহল্লাত চৌধুরীর মেয়ে। সে বড়াইল উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ বেলা আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে নবীনগর উপজেলার লঞ্চঘাট থেকে মালামালসহ যাত্রীবাহী একটি ট্রলার নরসিংদীর মির্জাচরের উদ্দেশে রওনা হয়। ট্রলারের ওপর ১০০ সিমেন্টের বস্তা ও ভেতরে ৫০ থেকে ৬০ জন যাত্রী ছিল। ট্রলারটি উপজেলার তিতাস নদের সীতারামপুর এলাকায় পৌঁছালে নদে থাকা সীতারামপুর-মনতলা সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ট্রলারটি ডুবে যায়। পরে যাত্রীরা ট্রলার থেকে ঝাঁপিয়ে নদীতে পড়ে সাঁতার কেটে তীরে চলে আসে। নদের দুই পাড়ে থাকা স্থানীয় লোকজন ট্রলারটিকে টেনে নদের তীর মনতলায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও নবীনগর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাফসি আমার ইউনিয়নের একই গ্রামের বাসিন্দা। নরসিংদী মামার বাড়ি যেতে নবীনগর লঞ্চঘাট থেকে ট্রলারে উঠেছিল। তবে সে সাঁতার জানত না। সাঁতার জানলে হয়তো বেঁচে যেত।’

নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল ছিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, অতিরিক্ত মালামাল ও যাত্রী বোঝাই করায় ট্রলারডুবির ঘটনাটি ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সীতারামপুর এলাকায় পৌঁছালে সেতুর পিলারের সঙ্গে ট্রলারের ধাক্কা লাগে। এতে ট্রলারের নিচে ফুটো হয়ে যায়। ফুটো অংশ দিয়ে ট্রলারের ভেতরে পানি প্রবেশ করতে থাকে। একপর্যায়ে ট্রলার পানিতে ডুবে যায়। তবে ডোবার আগেই ট্রলারে থাকা যাত্রীরা সাঁতরে পাড়ে চলে আসে। তবে দুজন যাত্রী মারা যান।

নবীনগর ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে তাৎক্ষণিক সীতারামপুর এলাকায় পৌঁছাই। তখন স্থানীয়দের ট্রলারটিকে টেনে তীরে আনতে দেখি। আমরা উদ্ধার অভিযান শুরু করি। ট্রলারডুবির ঘটনায় কাউকে নিখোঁজ পায়নি। স্থানীয় লোকজন নিহত দুজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফারজানা ওমর প্রথম আলোকে বলেন, ট্রলারডুবির ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। একজনের নাম রাফসি চৌধুরী ও অন্যজনের নাম হাফেজ মোহাম্মদ উল্লাহ। হাসপাতালে আনার পর তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ট্রলার ডুবেছে। ট্রলারে অতিরিক্ত মালামাল ও যাত্রী ছিল। দুজন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তবে কেউই নিখোঁজ নন। নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।