রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বাকি দিয়ে প্রায় পথে বসা মো. মানিক হোসেন (৩০) ওরফে ‘বাবু ভাই’ দোকান বন্ধ করার ১০ দিনের মাথায় বাকির টাকা পেতে শুরু করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত খুব অল্প টাকাই ফেরত পেয়েছেন তিনি। বাকির টাকা পরিশোধ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রলীগের একজন নেতা আছেন। এ ছাড়া অনেকেই তাঁর সঙ্গে দেখা করে সময় চেয়ে নিচ্ছেন।
মানিক হোসেন নিজেই প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কত টাকা ফেরত পেয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাকি আছে আড়াই লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত উঠেছে ৯ হাজার টাকা। এটা খুব কম, তবে তিনি আশাবাদী, শিক্ষার্থীরা টাকা দিয়ে দেবেন। টাকা পেলে এই মাসের কোনো এক সময় দোকানটা চালু করতে চান। আর না হলে তালিকা প্রকাশ করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে খাবারের দোকান চালাতেন মানিক হোসেন। শিক্ষার্থীরা তাঁকে বাবু ভাই বলে ডাকেন। বাজার করার টাকা না থাকায় নিরুপায় হয়ে সম্প্রতি তিনি তাঁর দোকানটি বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর গত ২৮ ডিসেম্বর বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয় ও বাকির পরিমাণ প্রকাশের ঘোষণা দেন মানিক হোসেন। নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের যেকোনো দিন এ তালিকা প্রকাশের কথা তাঁর। এ খবরে বাকি খাওয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। অনেকে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।
আজ সোমবার দুপুরে মানিক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দোকানে বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ দুই দিন ধরে যোগাযোগ করছেন। কম টাকা বাকি আছে, এমন শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করেছেন। আবার অনেকেই এসে সময় চেয়ে নিচ্ছেন। ছাত্রলীগের এক নেতা বাকির ১০ হাজার টাকার মধ্যে ২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি পুরো টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি টাকা বাকি রেখেছেন এমন কয়েকজন শিক্ষার্থী ১০ জানুয়ারির মধ্যে টাকা দেবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁরা নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে পড়াশোনা শেষে চাকরি নিয়ে ঢাকায় চলে গেছেন, বাকি খাওয়া এমন কয়েকজন শিক্ষার্থী যোগাযোগ করছেন না।
মানিক ২০০০ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে খাবারের দোকান চালান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা হলের ডাইনিং বা ক্যানটিনের বাইরে মানিকের দোকানে খেয়ে থাকেন। মানিকের বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকায়। তাঁর দোকানে ১০ থেকে ১২ জন কাজ করতেন। দোকান বন্ধ হওয়ায় তাঁরাও কাজ হারিয়েছেন। এর আগে মানিকের দোকান থেকে ছাত্রলীগের দুই নেতা মাসিক চাঁদা তুলতেন। চলতি বছর বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সেটা বন্ধ হয়।
করোনার পর ক্যাম্পাস খুললে মানিকের কাছে ১০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী বাকি খেয়েছেন। তাঁদের কাছে বাকি পড়েছে আড়াই লাখ টাকা। এসব শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ২৮ হাজার থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাকিতে খেয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
বাকি দিয়ে ঋণগ্রস্ত মানিকের খোঁজখবর নিচ্ছেন অনেকেই। তিনি বলেন, দেশ ও দেশের বাইরের অনেকেই খোঁজ নিচ্ছেন। তাঁরা বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তাঁরাও টাকা পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন। অনেকেই তাঁর পাশে দাঁড়াতে চাচ্ছেন।
যৌথ পরিবারে মানিকের দোকানের ওপর নির্ভর করে ১০ থেকে ১২ জনের সংসার চলে। শিক্ষার্থীদের বাকি দিয়ে তিনি ঋণে জড়িয়েছেন। মানিকের দাবি অনুযায়ী, মুদিখানায় তাঁর বাকি পড়েছে তিন লাখ টাকা। এখনো তিনি ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন।
মানিকের দোকানে টাকা বাকি রাখা কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বাবু ভাই এত অর্থ সংকটে আছেন, তাঁরা তা জানতেন না। তিনি বাকি চাইলে না করেন না। এ কারণে বাকির পরিমাণ বেশি হয়ে গেছে। তাঁরা দ্রুতই টাকা পরিশোধ করার জন্য চেষ্টা করছেন।