কলাপাড়ায় ডুবে গেছে ২৪০০ পুকুর, চার শতাধিক মাছের ঘের

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে ফুঁসে ওঠা জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ার চর গ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় রিমালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বেশি ক্ষতি হয়েছে পুকুর, মাছের ঘের, বন এবং আধা পাকা ও কাঁচা ঘরবাড়ির। উপজেলা প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির পরিপূর্ণ হিসাব এখনো নিরূপণ করতে পারেনি।

তবে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো প্রাথমিক কিছু তথ্য দিয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, উপজেলার ২ হাজার ৪০০ পুকুর এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে ৪ শতাধিক মাছের ঘের অতি বর্ষণ ও প্রবল জোয়ারে ডুবে গেছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জোয়ারের পানির সঙ্গে বের হয়ে গেছে। তবে এতে প্রকৃত অর্থে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করা এ মুহূর্তে সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন ফসলসহ আউশ ধানের বীজতলা করেছিলেন কৃষকেরা। এসব ফসলের ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করতে পারিনি। আমরা দু–এক দিন পরে বলতে পারব।’

কলাপাড়া বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুল হক জানান, চাম্বলগাছই বেশি উপড়ে পড়েছে। এ ছাড়া আকাশমনি, রেইনট্রি, বাবলা, মেহগনিগাছ উপড়ে পড়েছে। তবে গাছের সঠিক হিসাব এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ঝড়টি বলতে গেলে প্রায় দুই দিন ধরে উপকূলে আঘাত চালিয়েছে। তবে এতটুকু বলা যায়, গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার রেঞ্জের আওতায় কোনো সরকারি স্ট্রিপ বাগান নেই। তবে ঝাউবাগান, কড়ইবাগান আছে। এখনো ঝড় শেষ হয়নি। যে কারণে হিসাব-নিকাশ করতে পারিনি। এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা আগামীকাল মঙ্গলবার দেওয়া যাবে।’

ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা অনেকটা ভেঙে পড়েছে। পল্লী বিদ্যুতের কলাপাড়া কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সজীব পাল জানান, কলাপাড়া এবং কুয়াকাটা এলাকায় ৩৩ কেভি ডাবল সার্কিট লাইনের বেশ কয়েকটি খুঁটি ভেঙে গেছে, অনেকগুলো খুঁটি উপড়ে গিয়েছে এবং হেলে পড়েছে। যার কারণে বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা খুব দ্রুত সচল করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা সচল করতে দুই–তিন লাগতে পারে।

কলাপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. হুমায়ুন কবীর জানান, কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৭৫ হাজার ১৩০ জন। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ১৪০টি বাড়ি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৬২০টি বাড়ি। মারা গেছেন একজন।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি জানার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেনের মুঠোফোনে অনেকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কলাপাড়া এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার মানুষের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. মহিববুর রহমান এক লাখ বান্ডেল ঢেউ টিন ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের জন্য ৩ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও জলকপাটের তালিকা করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল কলাপাড়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এতে কলাপাড়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোন কোন খাতে কী ক্ষতি হয়েছে, আমরা তা বের করার চেষ্টা করছি। এরপর পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোসহ সবকিছু গোছানোর কাজে হাত দেওয়া হবে।’