নারায়ণগঞ্জে সাততলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে কাউন্সিলরের স্ত্রীর মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় সাততলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে কাউন্সিলর শাহ্জালাল বাদলের স্ত্রী সাদিয়া ইসলাম ওরফে নিঝুর (৩০) মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে ছাদ থেকে পড়ে গেলে গুরুতর আহত হন তিনি। তখনই গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সাদিয়া চাষাঢ়া এলাকার হায়দার আলী শামীমের মেয়ে ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র শাহজালাল বাদলের স্ত্রী। শাহজালাল বাদল আলোচিত সাত খুন মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ভাতিজা। সাদিয়া তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে চাষাঢ়া এলাকার সাততলা ভবনের ছয়তলায় একটি ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করতেন। একই ভবনের তিনতলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মা ঝর্ণা হায়দারের সঙ্গে বিউটি পারলার চালাতেন সাদিয়া। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি স্বামীর বিরুদ্ধে ভরণপোষণ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সাদিয়া।
ওই ভবনের তত্ত্বাবধায়ক মনা মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ভবনের সামনে সড়কে বসে কথা বলছিলেন। এ সময় হঠাৎ ভবনের পেছনে থাকা টিনের ওপর কিছু পড়ার বিকট শব্দ শুনতে পান। তাঁরা ভবনের পেছনে গিয়ে দেখেন, টিনের চালা ভেঙে সেখানে সাদিয়া আহত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে তাঁরা সেখান থেকে উদ্ধার করে তাঁকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সাদিয়া প্রায়ই ছাদে হাঁটতে যেতেন। ওই ছাদে কোমরসমান নিরাপত্তাবেষ্টনী রেলিং আছে বলে জানিয়েছেন মনা মিয়া।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা নুরুজ্জামান জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সাদিয়ার মা ঝর্ণা হায়দার বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে সাদিয়া তাঁর সঙ্গে বসে গল্প করেছেন। পরে তিনি তিনতলায় নেমে এলে সাদিয়া ছাদে হাঁটতে যান। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সাদিয়া প্রতিদিনই ছাদে হাঁটতে যেতেন বলে জানান তিনি।
সাদিয়ার উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস আছে উল্লেখ করে ঝর্ণা বলেন, ‘মনে হয় ছাদের কিনারায় গিয়েছিল। তখনই ছাদ থেকে পড়ে নিঝুর (সাদিয়া) মৃত্যু হয়েছে।’ মানসিক অবসাদ বা পারিবারিক কোনো ঝামেলা ছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো ঝামেলা ছিল না। আমার দুই মেয়ে। ওরা আমার সঙ্গেই থাকত। ও আমারে ছেড়ে চলে গেছে,’ এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
সাদিয়ার স্বামী শাহ্জালাল বাদল বলেন, ‘আমি সিদ্ধিরগঞ্জে আমার অফিসে ছিলাম। আমার শাশুড়ি আমাকে ফোন করে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসতে বলেন। হাসপাতালে এসে শুনি, নিঝু ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে। আমার শাশুড়ির বক্তব্য অনুযায়ী, ছাদে হাঁটতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।’
শাহ্জালাল বাদল সিদ্ধিরগঞ্জে থাকেন। সাদিয়া চাষাঢ়ায় বাস করলেও মাঝেমধ্যে সেখানে যেতেন। পারিবারিক কোনো কলহ চলছিল না দাবি করে তিনি বলেন, ‘চার-পাঁচ দিন আগে নিঝু আমার বাসায় গিয়েছিল। আমার বাচ্চা ক্যামব্রিয়ান স্কুলে পড়াশোনা করে। তাই এখানে (চাষাঢ়ায়) বেশি থাকত।’
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীর লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করার পর ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। ছাদ থেকে পড়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের বিরুদ্ধে ভরণপোষণ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সাদিয়া হায়দার। ১০ বছরের সংসারজীবনে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নেই বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁদের সংসারে এক সন্তান আছে।