মাঠপর্যায়ে লবণের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ৮০-১৫০ টাকা, চাষিরা খুশি

কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা এলাকায় থাকা অপরিশোধিত লবণ
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার উপকূলের মাঠে পড়ে থাকা লবণের বেচাবিক্রি হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। দামও বেড়েছে অনেক। ১৫-২০ দিন আগেও প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছে ৩২০-৩৩০ টাকায়। ঈদুল আজহার পর থেকে প্রতি মণ লবণের দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ বর্তমানে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকায়। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি লবণের দাম পড়ছে ১০ থেকে ১২ টাকা, যা আগে বিক্রি হয়েছিল ৩ থেকে ৬ টাকায়। তবে বাজারে আয়োডিনযুক্ত প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।

চাষিদের ভাষ্য, কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য হঠাৎ অপরিশোধিত লবণের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে মাঠে মজুত লবণের দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, এখন লবণ উৎপাদনের মৌসুম নয়। গত মৌসুমে কক্সবাজার উপকূলে উৎপাদিত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন লবণ অবিক্রীত অবস্থায় পড়েছিল চাষিদের কাছে। এখন সেই লবণ বেচাবিক্রি হচ্ছে।

কয়েকজন চাষি বলেন, এক দশক ধরে চাষিরা প্রতি কেজি লবণ বিক্রি করেন তিন থেকে ছয় টাকায়। হঠাৎ করে লবণের দাম বাড়ায় চাষিরা খুশি। এত দিন লোকসানের অভাবে ফেলে রাখা লবণ বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা। মাঠ থেকে ট্রাক বোঝাই করে বিপুল পরিমাণ লবণ সরবরাহ করা হচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

তবে বিসিক জানায়, লবণ উৎপাদনের মৌসুম না হলেও এখন দেশে লবণের সংকট নেই। সারা দেশে এক কোটির বেশি কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য দরকার ছিল এক লাখ মেট্রিক টন লবণ। কক্সবাজারের মাঠ থেকেই চাহিদার অধিকাংশ লবণ সংগ্রহ করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডী, টেকনাফের সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, হ্নীলা, হোয়াইক্যং, মহেশখালীর কালারমারছড়া, মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, কুতুবদিয়ার লেমশিখালী, বড়ঘোপ ইউনিয়নে প্রতি কেজি লবণ পাইকারিতে ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া, লিংকরোড, বড়বাজার, কানাইয়ার বাজারসহ খুচরা বাজারগুলোতে বেচাবিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি লবণ ১২ টাকায়।

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের চাষি জালাল আহমদ বলেন, গত মার্চ মাসে মাঠে উৎপাদিত প্রতি মণ লবণ তিনি বিক্রি করেছিলেন ২৮০ টাকায়। প্রতি মণ লবণ উৎপাদনের বিপরীতে তাঁর খরচ হয়েছিল ২১০ টাকা। লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি না করে তিনি তখন ৫৫ মণ লবণ মাটির নিচে পুঁতে (মাটিচাপা) রাখেন। এখন সেই লবণ প্রতি মণ ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন। গতকাল ২৩ মণ লবণ বিক্রি করেন তিনি। আজ শনিবার আরও ৩০ মণ লবণ বিক্রির কথা চলছে।

বিসিকের দেওয়া তথ্যমতে, গত মৌসুমে (১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৮ মে পর্যন্ত পাঁচ মাস) কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও এবং বাঁশখালী উপজেলার ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন।

এবার লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন ধরা হয়েছিল জানিয়ে বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লবণের বাম্পার উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে এপ্রিল-মে মাসে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হওয়ায় ২০ থেকে ২৫ দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ ছিল। তাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে এ কারণে দেশে লবণের সংকট হবে না। বর্তমানে মাঠে চাষিদের কাছে ও গুদামে আছে সাড়ে পাঁচ লাখ টন লবণ। এই লবণে আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলে যাবে। ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার উপকূলে নতুন করে শুরু হবে লবণ উৎপাদন।

বিসিক কর্মকর্তারা বলছেন, গত মৌসুমের শেষ মুহূর্তে (এপ্রিল-মে) বাজারে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছিল ২৫০-২৮০ টাকায়। এখন সেই লবণ বেচাবিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৮০ টাকায়। জেলার প্রায় ৪০ হাজার প্রান্তিক চাষি, এক লাখ শ্রমিকসহ অন্তত ১০ লাখ মানুষ লবণ উৎপাদন, পরিবহন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

বিসিক কক্সবাজার লবণ প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক ইদ্রিস আলী বলেন, এখন কক্সবাজারের মাঠে চাষিদের হাতে মজুত আছে চার লাখ মেট্রিক টন লবণ। জেলার বিভিন্ন লবণ মিল ও ব্যবসায়ীদের গুদামে সংরক্ষিত আছে আরও দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ। সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন লবণের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে আরও দেড় লাখ টন লবণ। সব মিলিয়ে সাত লাখ মেট্রিক টন লবণে আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। কক্সবাজারসহ সারা দেশে কোরবানির পশুর প্রায় এক কোটি চামড়া সংরক্ষণের জন্য দরকার ছিল এক লাখ মেট্রিক টন লবণ, তা ইতিমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। দেশে এখন লবণের কোনো সংকট নেই।