মু্ন্সিগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধে কৃষক লীগ নেতার ছেলেকে গুলি করে হত্যা

নিহত তুহিন দেওয়ানছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধের জেরে এক তরুণকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মুন্সিকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণের নাম তুহিন দেওয়ান (২২)। তিনি মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি ও দক্ষিণ বেহেরকান্দি এলাকার সেলিম দেওয়ানের ছেলে।

বিবদমান দুটি পক্ষের একটির নেতৃত্বে আছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদ রায়হান ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিক মোল্লা। অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উজির আহমেদ। নিহত তুহিন দেওয়ান ওয়াহিদ-আতিক মোল্লাদের সমর্থক ছিলেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, এ ইউনিয়নে বসবাসকারী সে দলের নেতারা আধিপত্য বিস্তার করতে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যান। তাঁদের সমর্থকদের নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। আওয়ামী লীগের আমলে চেয়ারম্যান রিপন হোসেন এক পক্ষে ও মহসিনা হক অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন। বিএনপির লোকজন তখন আওয়ামী লীগের ওই দুই পক্ষের হয়ে কাজ করতেন। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতারা পালিয়ে যান। শুরু হয় বিএনপি নেতাদের আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। দল ভারী করতে বিএনপি নেতাদের দুটি পক্ষ আওয়ামী লীগের লোকজনকে এলাকায় এনে নিজেদের দলে ভেড়াতে শুরু করে। তুহিনদের দলে ভেড়ায় ওয়াহিদ পক্ষ। শুরু হয় ওয়াহিদ রায়হান ও উজির আহমেদের দ্বন্দ্ব। গত ৫ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে আটজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় এলাকায় এই দুই পক্ষের লোকজন হাতাহাতি ও বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন। এর জের ধরে রোববার রাত ১০টার দিকে তুহিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ছেলের মৃত্যুতে কাঁদছিলেন নিহত তুহিনের মা। গতকাল রোববার রাতে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: সংগৃহীত

নিহতের চাচাতো ভাই আকাশ দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তুহিন রাতে হাঁটাহাঁটি করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তিনি বাড়ির পাশে মুন্সিকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে যান। সেখানে উজির আহমেদের পক্ষের লিটন, সাইদুল ও নোবেলরা তুহিনকে গুলি করে ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। আমরা বাড়ি থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়ে স্কুলের সামনে এসে দেখি, তুহিনের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। আমাদের দেখে লিটন ও তাঁর লোকজন পালিয়ে যান। দ্রুত তুহিনকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে তুহিনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রান্ত সরকার বলেন, তুহিন নামের ওই ব্যক্তিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর পিঠ ও ঘাড়ে একাধিক গুলির চিহ্ন আছে।

আকাশ দেওয়ান বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই নিরীহ। সে কোনো ঝগড়ায় ছিল না। ওয়াহিদদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। তাই উজির আহমেদের নির্দেশে তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে।’

এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফোন করলে বিএনপি নেতা উজির আহমেদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। অভিযুক্ত লিটন ও নোবেলকে তাঁর সমর্থক বলে স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, যিনি মারা গেছেন এবং যাঁরা মেরেছেন, তাঁরা সবাই ইয়াবা ব্যবসায়ী।

মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির বলেন, পুলিশ রাতেই মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। এ ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।