অস্ত্রোপচার বন্ধ ১১ বছর

২০১২ সাল থেকে এখানে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ নেই। এই কারণে ওই বছর থেকে এখানে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ভবন। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  সিজারিয়ানসহ সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, সার্জারি এবং অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকায় দীর্ঘ ১১ বছর ধরে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার বন্ধ। এতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে রোগীদের বাইরে গিয়ে অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে। এতে দরিদ্র রোগীদের সমস্যা হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া চিকিৎসকের সংকট থাকায় এখানে এসে রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ২০১২ সালে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর সেই শূন্য পদ আজও পূরণ হয়নি। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে একজন অবেদনবিদ হাসপাতাল থেকে বদলি হয়ে যান। এরপর এখানে আর অবেদনবিদ নিয়োগ দেওয়া হয়নি । এ কারণে জরুরি বিভাগ ছাড়া বন্ধ আছে সব ধরনের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম। নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের মোট পদ ৩২টি। এর মধ্যে ১৫টি পদ শূন্য।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের জন্য অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে হয়।

আবার ক্লিনিকগুলোতে অস্ত্রোপচার করাতে হলে চিকিৎসকের ফি, ওষুধ, ভাড়াসহ রোগীদের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা গুনতে হয়। অথচ সরকারি হাসপাতালগুলোতে মাত্র চার হাজার টাকায় এ ধরনের অস্ত্রোপচার করা যায়।

১৮ সেপ্টেম্বর সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকায় অটোক্লেভ যন্ত্রসহ অস্ত্রোপচার কক্ষের সব যন্ত্রপাতি ধুলাবালু পড়ে মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১০ সালে ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য আমির হোসেন ৫০ শয্যায় উন্নীত করেন। শয্যা বাড়লেও চিকিৎসক সংকট দীর্ঘদিনের। এতে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নলছিটি পৌর এলাকাসহ উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নের দুই লাখ মানুষ।

এদিকে প্যাথলজি বিভাগের উন্নত কক্ষ ও যাবতীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ।

পৌরসভার মালিপুর গ্রামের গৃহিণী আসমা আক্তার বলেন, সম্প্রতি তাঁর এক গর্ভবতী আত্মীয়কে সিজারের জন্য হাসপাতালে এনেছিলেন। কিন্তু এখানে সিজারের ব্যবস্থা না থাকায় ক্লিনিকে ২০ হাজার টাকায় সিজার করাতে হয়েছে। এই টাকা জোগাড় করতে তাঁর স্বজনদের গাছ বিক্রি করতে হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আনসার আলী জানান, হাসপাতাল থেকে শুধু ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক ও জ্বরের ওষুধ পাওয়া যায়। এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাফিহ অনেক পরীক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হয়। এতে গরিব পরিবারের রোগীরা সমস্যায় পড়েন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শিউলী পারভীন বলেন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে স্বাস্থ্য খাত আগের চেয়ে অনেক আধুনিক হয়েছে। তবে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যার বিষয়টি আমি জানি। ওই হাসপাতালের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।’