নাটোরের বারনই নদে যে কারণে ভেসে উঠছে মরা মাছ

গত সোমবার ভোর থেকে বারনই নদে ছোট-বড় অসংখ্য মাছ ভেসে উঠতে শুরু করেছে
ছবি: প্রথম আলো

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বারনই নদে তিন দিন ধরে নানা প্রজাতির দেশি মাছ মরে ভেসে উঠছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজনের মতে, নদজুড়ে পাট জাগ দেওয়ার কারণে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় মাছ মারা যাচ্ছে। এতে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের বংশবিস্তার ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার ভোর থেকে বারনই নদে ছোট-বড় অসংখ্য মাছ ভেসে উঠতে শুরু করে। ভেসে ওঠা মাছগুলো মরা ও আধা মরা অবস্থায় ছিল। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত মাছ ভেসে উঠতে দেখা গেছে। ভেসে ওঠা মাছের মধ্যে রয়েছে বোয়াল, রুই, কাতল, চিতল, কালবাউশ, পুঁটি, ট্যাংরাসহ নানা মাছ। এসব মাছ ধরতে নদের দুই পাড়ে অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন। এর মধ্যে অনেকে ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের বোয়াল, রুই, কাতলা ও চিতল ধরেছেন।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পাট জাগ দেওয়ার জন্য জলাশয় পাচ্ছেন না। এ কারণে অধিকাংশ কৃষক বিভিন্ন এলাকা থেকে পাট এনে বারনই নদে জাগ দিচ্ছেন। এতে নদের পানি দূষিত হয়ে মাছ মরে যাচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার ভোরে উপজেলার শ্যামনগর, হাফানিয়া, পাটুল, আচড়াখালি, কালীগঞ্জসহ বারনই নদের তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন নদে নেমে হুড়োহুড়ি করে মাছ ধরছেন। অধিকাংশ দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এসব মাছ জাল ও পলো দিয়ে ধরছেন স্থানীয় লোকজন।

মাছ ভেসে ওঠার পর থেকে স্থানীয় লোকজন নদে নেমে হুড়োহুড়ি করে মাছ ধরছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে পাটুল এলাকায়

শ্যামনগরের বাসিন্দা সন্তোষ কুমার বলেন, ‘নদ থেকে প্রায় পাঁচ কেজি মরা মাছ ধরেছি। আমার মতো শত শত লোক মরা, আধা মরা মাছ ধরছেন। অনেকে এসব মাছ বিক্রি করছেন।’

একই গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ২৩ জুলাই হঠাৎ এ নদে মরা মাছ ভেসে উঠেছিল। এরপর গত সোমবার থেকে আবারও ব্যাপক হারে মাছ ভেসে উঠতে শুরু করেছে। নদের দুই কিনারে কয়েক দিন ধরে অনেক কৃষক পাট জাগ দিয়েছেন। পাট পচে পানি ঘোলা হয়ে গেছে এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই হয়তো মাছ মরে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কামাল আজাদ বলেন, বারনই নদে ছয়টি মৎস্য অভয়াশ্রম আছে। মূলত পাট জাগ দেওয়ার কারণে নদের পানি দূষিত হয়ে গেছে। এতে ওই নদে মাছের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় মাছ মরে যাচ্ছে। মাছ বাঁচাতে হলে দ্রুত নদের পানিতে পাট জাগ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।