দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদে পড়ে রানা প্লাজার শ্রমিকদের জীবন দিতে হয়েছে: আখতার হোসেন
দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদে পড়ে রানা প্লাজার শ্রমিকদের জীবন দিতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভার বাসস্ট্যান্ডের অদূরে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে এক সমাবেশ তিনি মন্তব্য করেন।
সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, রানা প্লাজার মালিক রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে ভবনে ফাটল থাকা সত্ত্বেও কারখানাগুলো খোলা রাখার হুকুম দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার রাজনীতিকে এমনভাবে দুর্বৃত্তায়ন করেছিল, যে দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদে পড়ে রানা প্লাজার শ্রমিকদের জীবন দিতে হয়।
এনসিপির শ্রম উইং এ সমাবেশের আয়োজন করে। পরে রানা প্লাজা ধসে নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়ার আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষা-দীক্ষা অর্জনের পর সরকারি চাকরি করে পেট চলবে, পরিবারের ভরণপোষণ করবে—এই সক্ষমতা নেই। দেশের অধিকাংশ মানুষ খেটে-খাওয়া শ্রমিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির শ্রমিকেরা কর্মস্থলে তাঁদের শ্রম জীবনকে নিরাপদে অতিবাহিত করতে পারবেন—এই নিশ্চয়তাটুকু সরকার এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারে নাই। এ জন্য দায়ী দেশের দুর্বৃত্তায়ন, পচে-গলে যাওয়া রাজনীতি।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর বিদেশি সংস্থাগুলো উদ্ধারকাজ পরিচালনার অনুমিত চাইলে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার বাধা দেয়। কারণ, তারা দেশে যে দুর্বৃত্তায়ন করেছিল, রানা প্লাজার মধ্য দিয়ে তা আন্তর্জাতিক মিডিয়া, আন্তর্জাতিক সমাজে যাতে প্রকাশিত না হয়, সে জন্য এই অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরের ঘটনা আরও বীভৎস। ভবনে আটকে থাকা যাঁদের জীবনপ্রদীপ তখনো নিভে যায়নি। তাঁদের উদ্ধারের নাম করে লাশগুলো গুম করার মেকানিজম করেছিল সাভারের কুখ্যাত সন্ত্রাসী এনাম (সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান)।’ তিনি বলেন, চব্বিশের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খুনি হাসিনা, এনাম, সোহেল রানাদের (রানা প্লাজার মালিক) পরাজয় হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলোর বিচারকাজ দ্রুতগতিতে করার আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এনসিপির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আমাদের শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল, ন্যূনতম মজুরিসহ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা দিবসকে জাতীয় শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। ২৪ এপ্রিল সব শিল্প কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হবে। এদিনে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো নিরসনে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটি সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।’
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও ক্ষতিপূরণসহ আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত হাসপাতাল সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই স্থাপন করতে হবে। রানা প্লাজায় যেসব অনুদান এসেছে, সেগুলো যাঁরা কুক্ষিগত করেছেন, তাঁদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য আসা অনুদান শ্রমিকদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করতে হবে। শ্রমিকদের যাঁরা শোষণ করেন, কর্মস্থলে দুর্বল করে রাখেন, শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলার সুযোগ যাঁরা দেন না, তাঁদের রাষ্ট্রীয় পদপদবি ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।
সমাবেশে এনসিপির শ্রম উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল আমিন, রিফাত রশীদ, ফয়সাল মাহমুদ, জয়নাল আবেদিন, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মেহেরাব সিফাত, রিয়াজ মোরশেদ, যুগ্ম সমন্বয়ক ভীম্পাল্লী ডেভিডসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকেরা উপস্থিত ছিলেন।