রাকসুর জিএস ক্যাম্পাসে নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন : জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম

ডিনদের পদত্যাগপত্র হাতে নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে একে একে তাদের কল করেন রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। গত রোববার সকালে রাকসু ভবনের সামনেপ্রথম আলোর ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাউদ্দিন আম্মারের বিরুদ্ধে অশালীন আচরণ ও হুমকির মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ এনে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।

গতকাল সোমবার রাতে ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মাদ আমীরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি রাকসুর জিএস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশে অশালীন ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। পাশাপাশি যখন-তখন বিভিন্ন দপ্তরে তালা লাগিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং তাঁদের সঙ্গে অশোভন আচরণের মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পাসে ভীতিকর ও নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।

আরও পড়ুন

বিবৃতিতে ফোরামের নেতারা বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যার ঘটনায় যেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তাঁরা, তেমনি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বিপক্ষে অবস্থানকারী ফ্যাসিবাদীদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি তাঁরা জানিয়ে আসছেন। তবে এ বিষয়ে তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াকে তাঁরা স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের সঙ্গে তুলনা করেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। অধ্যাদেশ অনুযায়ী ডিন, সিন্ডিকেট, শিক্ষা পরিষদ ও অর্থ কমিটির মতো স্ট্যাটিউটরি বডিগুলো নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়। বর্তমান ডিনদের মেয়াদ ১৭ ডিসেম্বর শেষ হলেও নির্বাচন না হওয়ায় উপাচার্য অধ্যাদেশ অনুযায়ী দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডিনদের কোনো আইনি ত্রুটি বা অপরাধ নেই বলে মনে করে শিক্ষক ফোরাম।

তবে রাকসু জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া স্ট্যাটাস ও বক্তব্যে ডিনদের অপমান করা হয়েছে এবং শিক্ষকসমাজকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করে হুমকি দেওয়ায় ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা ও শিক্ষা-গবেষণার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম এ ধরনের অশালীন আচরণ ও অরাজকতা সৃষ্টির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও রাকসুর বর্তমান জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার পোষ্য কোটাবিরোধী আন্দোলনে দিনব্যাপী প্রশাসন ভবন তালাবদ্ধ করে প্রথমে শিক্ষকমহলে ‘বিতর্কিত’ হয়ে ওঠেন। পরে গত সেপ্টেম্বরে পোষ্য কোটা বহালের সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনসহ একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হয় দুই বছর আগে নির্বাচিত হওয়া ১২ ডিনের। তাঁদের উপাচার্য রুটিন দায়িত্ব দিয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। গত বৃহস্পতিবার সালাহউদ্দিন আম্মার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আওয়ামী লীগপন্থী ডিনদের পদত্যাগের সময় বেঁধে দেন এবং ডিনদের চেয়ারে দেখলে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও ‘বাকিটা বুঝিয়ে দেব’ বলে হুঁশিয়ারি দেন। পরে গত রোববার তিনি সেই ডিনদের পদত্যাগপত্র লিখে এনে একে একে সবাইকে কল দেন।

এ ছাড়া তাঁদের পদত্যাগের দাবিতে উপাচার্যসহ প্রশাসনের সব কার্যালয়ে তালা দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিন রুটিন দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানান। ওই ছয় ডিনের রুটিন দায়িত্ব উপাচার্য ও তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে দুজন উপ-উপাচার্য পালন করবেন বলে সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব গতকাল সোমবার সকালে এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেন।