বিশ্বম্ভরপুরে তিনটি কেন্দ্রে আবার ভোট গ্রহণের দাবি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতার

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনপ্রতীকী ছবি

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে আবার ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার বর্মণ। গতকাল বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তিনি এই লিখিত আবেদন জানান। একই আবেদনের কপি তিনি জেলা প্রশাসকের কাছেও দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম তালুকদার অসদুপায় অবলম্বন ও সন্ত্রাসের মহড়া প্রদর্শন করে বেআইনিভাবে তাঁর বিজয় ছিনিয়ে নেন। এ জন্য তিনি এই ফলাফল বর্জন করেছেন।

এর আগে দুবার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন উল্লেখ করে দিলীপ কুমার বর্মণ বলেন, প্রতিটি নির্বাচনে তিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। রফিকুল ইসলাম তালুকদার এসব নির্বাচনে তাঁর চেয়ে কম ভোট পেয়েছেন।

দিলীপ কুমার বর্মণ বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম তালুকদার বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে ধর্মীয় উসকানি, গুজব ও অপপ্রচার করে আমার ভোটারদের কাছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে অবৈধ ফায়দা হাসিল করেন।’

আবেদনে দিলীপ কুমার বর্মণ বলেন, উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের কাটাখালী পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে রফিকুল ইসলাম তালুকদার দলবল নিয়ে গিয়ে অতর্কিতভাবে কেন্দ্রে প্রবেশ করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তাসহ ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখেন। এ বিষয়ে তাঁর (দিলীপ বর্মণের) এজেন্টরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই কেন্দ্রে গিয়ে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের তালাবদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করলেও কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করা হয়নি। রাত সাড়ে ৯টায় ব্যালট বাক্স সহকারে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা কন্ট্রোল রুমে এলে তিনি কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত হয়ে জাল ভোট বাদ দিয়ে বৈধ ভোট চিহ্নিত করে ওই কেন্দ্রের বৈধ ভোট আবার গণনার জন্য সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন এবং লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁর অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় তিনি ও তাঁর সমর্থকেরা কন্ট্রোল রুম থেকে বের হয়ে আসেন।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে ভোট গ্রহণের আগেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করেছিলেন বলে লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন দিলীপ কুমার বর্মণ। তিনি বলেন, অভিযোগ দাখিলের পরও এসব কেন্দ্রে নির্ধারিত এজেন্ট ছাড়াও রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রতিটি বুথে তাঁর প্রাইভেট এজেন্ট নিয়োগ করে ভোটারদের আনারস প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রয়োগে প্রভাবিত করেন। বিষয়টি প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে জানালে এবং সরেজমিন দেখালেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে রহস্যজনক নীরবতা পালন করে।

দিলীপ কুমার বর্মণ বলেন, ধনপুর ইউনিয়নের কাটাখালী পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়, পলাশ ইউনিয়নের পলাশ উচ্চবিদ্যালয় ও ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর মুরারীচাঁদ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে যেহেতু ব্যাপক কারচুপি, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। তাই এই তিন কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল ঘোষণা করে এসব কেন্দ্রের ভোট আবার গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন। আবার ভোট গ্রহণ না করা পর্যন্ত নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

দিলীপ কুমার বর্মণ বলেন, ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি আইনেও তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।

চেয়ারম্যান প্রার্থী দিলীপ কুমার বর্মণের একটি আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পাঁচজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিন নেতা প্রার্থী ছিলেন। বিএনপির ছিলেন দুজন। জয়ী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তালুকদার, তিনি পেয়েছেন ১৬ হাজার ১৯২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার বর্মণ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৩২ ভোট। বিএনপির সাবেক উপজেলা সভাপতি হারুনুর রশিদ পেয়েছেন ১১ হাজার ৬২২ ভোট। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আরেক নেতা মোহন বাচ্চু পেয়েছেন ১২ হাজার ৮৮৪ ভোট। যুবলীগের নেতা রনজিত চৌধুরী পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৪৯ ভোট।