বোনকে উত্ত্যক্তের বিচার চাওয়ায় তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যা, আটক ১০

হত্যা
প্রতীকী ছবি

ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ছোট বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ছুরিকাঘাতে এক তরুণকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার শুভপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ জনকে আটক করেছে।

নিহত তরুণের নাম রবিউল হক ওরফে শাহেদ (২০)। তিনি উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে। রবিউল এক্সকাভেটরচালকের সহকারীর কাজ করতেন।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে রবিউল হক তাঁর ছোট বোনসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গতকাল বিকেলে শুভপুর ইউনিয়নের শমসের গাজীদীঘি এলাকায় বেড়াতে যান। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা কয়েক তরুণ রবিউলের ছোট বোনকে উত্ত্যক্ত করেন। রবিউল তখন প্রতিবাদ করলে তাঁরা ক্ষিপ্ত হন। এ নিয়ে একপর্যায়ে তর্কাতর্কি হয়।

সেখান থেকে ফিরে শুভপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফজলুর রহমানের কাছে বিচার দেন রবিউল। ইউপি সদস্য উভয় পক্ষকে সন্ধ্যায় শুভপুর বাজারে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ডাকেন। সেখানে যাওয়ার পর রবিউলের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন অভিযুক্ত তরুণেরা। একপর্যায়ে রবিউলকে উপর্যুপরি বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক রবিউলকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে রবিউলের ওপর হামলার পর স্থানীয় লোকজন অভিযুক্ত তরুণদের ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে তাঁরা শুভপুর বাজারে ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। তখন ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান ওই কার্যালয়ের বাইরে থেকে তালা দিয়ে পুলিশে খবর দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিউলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরোনো মহাসড়কের শুভপুর রাস্তার মোড় এলাকায় সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের জানালার কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ মানুষদের সামাল দেওয়ার সময় ছাগলনাইয়া থানার দুই পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হন। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরোনো মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১২টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

খবর পেয়ে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন ও ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদীপ রায় পলাশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ওসি বলেন, এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আটক ব্যক্তিদের পরিচয় আপাতত বলা যাচ্ছে না। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত তরুণের বড় বোন সাথী আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন।