ভোমরা বন্দরে এক ব্যবসায়ীর কার্যালয়ে অপর ব্যবসায়ীকে আটক রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

ভোমরা স্থলবন্দর
প্রথম আলো ফাইল ছবি

সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের এক ব্যবসায়ীর কার্যালয়ে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে ১৪ দিন আটকে রাখা ও নির্যাতন করার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পুলিশ সাউদ মোহাম্মদ সাদাত নামের ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে। আজ শনিবার তিনি বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা করেছেন।

মামলায় আসামি করা হয়েছে সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভোমরা বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাকছুদ খানসহ পাঁচজনকে। পুলিশ আজ অভিযান চালিয়ে এ এস এম মাকছুদ খান ও তাঁর অফিস ব্যবস্থাপক মহসিন কবীরকে গ্রেপ্তার করেছে। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ভুক্তভোগী সাউদ মোহাম্মদ সাদাত চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, এ এস এম মাকছুদ খানের সঙ্গে তাঁর ব্যবসা ছিল। ব্যবসার একপর্যায়ে মাকছুদ খানের কাছে তাঁর ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা দেনা হয়। তাঁর ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় তিনি পাওনা টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে পারেননি। কিন্তু মাকছুদ খান পাওনা টাকার জন্য তাঁকে চাপ দিতে থাকেন। টাকা কীভাবে পরিশোধ করা যায়, সে বিষয় আলোচনা করার জন্য তিনি ২ সেপ্টেম্বর তাঁর এলাকার দুই ব্যক্তি এজাহার মিয়া ও মো. আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে সাতক্ষীরা আসেন।

পুলিশ গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ভোমরা বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাকছুদ খানের অফিস থেকে তাঁকে উদ্ধার করে।

সাতক্ষীরায় এসে সাউদ মোহাম্মদ মাকছুদ খানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মহসিন কবীরকে ফোন দেন। মহসিন বলেন, মাকছুদ ভারতে আছেন। সাউদ মোহাম্মদকে ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অফিস আসতে বলেছেন। তিনি সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ওই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁকে কৌশলে অপহরণ করে মাকছুদ খানের ভোমরা এম অ্যান্ড ট্রেডার্সের অফিসে নিয়ে গিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে তাঁর মুঠোফোন দুটি নিয়ে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে মাকছুদ মুঠোফোনে তাঁকে বলেন, ‘তোর কাছে যে টাকা পাই, সে টাকা ফেরত দিয়ে তারপর এখান থেকে যাবি।’ এভাবে তাঁকে আটকে রেখে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।

১২ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে মাকছুদ খান এসে সাউদ মোহাম্মদ বলেন, ‘তুই আমার টাকা কখন দিবি? তুই টাকা না দিলে তোর ছাড় নেই।’ এ কথা বলে তাঁর হাতে থাকা ধাতব পাইপ দিয়ে হাতে-পায়ে, কোমরে, ঊরুতে আঘাত করে জখম করেন। পাশাপাশি তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন, এ কথা কাউকে জানলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। একপর্যায়ে গতকাল সাউদ মোহাম্মদ তাঁর স্ত্রী ফারহানা রেজাকে ঘটনা জানালে তিনি সাতক্ষীরা থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মাকছুদ খানের ভোমরার অফিস থেকে তাঁকে উদ্ধার করে।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাকছুদ খান চট্টগ্রামের ওই ব্যবসায়ীকে আটকে রাখার কথা অস্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তারের আগে গতকাল রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর (সাউদ মোহাম্মদ সাদাত) কাছে ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। ওই টাকার বিপরীতে দুটি চেক ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা রয়েছে। ওই টাকা পরিশোধে টালবাহানা করায় সাউদ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় ২৬ জুলাই ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় ৮ আগস্ট পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।

মাকছুদ আরও দাবি করেন, ব্যবসায়ী সাউদ মোহাম্মদ স্বেচ্ছায় তাঁর অফিসে ছিলেন। তাঁর অফিসে থেকেই তিনি তাঁর দেনাদারদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছিলেন। আগামী রোববার তাঁর ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। ওই টাকা দেবেন না বলেই তিনি এমন নাটক সাজিয়েছেন।