টিকিট চাওয়ায় রেল কর্মচারীদের মারধর করার অভিযোগ

দিনাজপুর রেলস্টেশনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মারধরে আহত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মাসুদ পারভেজ
ছবি : সংগৃহীত

দিনাজপুর রেলস্টেশনে এক যাত্রীর কাছে টিকিট দেখতে চাওয়া নিয়ে রেল কর্মচারীদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এ ঘটনা ঘটে। এতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য ও দুই কর্মচারী আহত হয়েছেন।

যাঁর কাছে টিকিট দেখতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি হলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দিনাজপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহ-নেওয়াজ। তিনি তাঁর অফিসে ফোন করে ৬-৭ জনকে ডেকে এনে এ মারধর করিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে কর্মবিরতি পালন করার কথা জানিয়েছেন রেল কর্মচারীরা।

এ ঘটনায় সন্ধ্যা ৭টায় রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল হক ভূঁইয়ার কক্ষে উভয় পক্ষের বৈঠক বসে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাত ৯টার দিকে বৈঠক চলছিল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মওলা, স্টেশন সুপার মো. মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।

আহত ব্যক্তিরা হলেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্য মাসুদ পারভেজ (৩০), টিকিট কালেক্টর রিপন মিয়া (২৭) ও পোর্টারম্যান মো. নাহিদ হাসান (৩২)। এর মধ্যে দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে মাথায় আঘাত পেয়ে দিনাজপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মাসুদ পারভেজ। তাঁর বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পারভেজ সোহেল রানা বলেন, আহত ব্যক্তির মাথার বাঁ পাশে কানের ওপরে তিনটি সেলাই পড়েছে। শক্ত কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এ ছাড়া বাঁ কাঁধে ব্যথা আছে। সেখানে এক্স-রে করতে বলা হয়েছে।

দিনাজপুর রেলস্টেশনের সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা ঘটনাটিতে ঔদ্ধত্যপনা দেখিয়েছেন। কাজটি মোটেও ঠিক হয়নি।

স্টেশনমাস্টার নারগিস আক্তার বলেন, বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে প্ল্যাটফর্মে দুটি ট্রেন দাঁড়ানো ছিল। এর মধ্যে একটি পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা পার্বতীপুরগামী কাঞ্চন এক্সপ্রেস। অপরটি সান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস। একদিকে প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ভিড়, আরেক দিকে লাইন ক্লিয়ারিংয়ের কাজ চলছিল। গেটে দাঁড়িয়ে তিনিসহ রেলের কয়েকজন যাত্রীর কাছে টিকিট চেক করছিলেন। ওই মুহূর্তে স্টেশন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করছিলেন শাহ-নেওয়াজ। তাঁর কাছে টিকিট আছে কি না, জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘আমাকে চেনো, আমি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।’ এ সময় টিকিট ছাড়া প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করা যাবে না জানালে তিনি টিকিট কালেক্টর রিপন মিয়াকে ধাক্কা দেন। উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে ওই ব্যক্তি মুঠোফোনে তাঁর অফিসের অন্যদের বিষয়টি জানান। কিছুক্ষণ পরই তাঁর অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী লাঠিসোঁটা নিয়ে প্ল্যাটফর্মে এসে রেলের তিনজনকে মারধর করেন। এ সময় তাঁরা উদ্ধত ভঙ্গিতে সবাইকে গালাগাল করতে থাকেন। পরে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা শাহ-নেওয়াজকে স্টেশন সুপারের কক্ষে নিয়ে যান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শাহ-নেওয়াজ বলেন, তাঁর অফিসের এক সদস্যকে কাউন্টারে টিকিট কাটতে পাঠিয়ে তিনি স্টেশনের প্রধান ফটক দিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে যান। বিষয়টি তিনি গেটে দাঁড়িয়ে থাকা স্টেশন সুপারকে জানালেও তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। ফোন করে ৬-৭ জনকে ডেকে আনার বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন শাহ-নেওয়াজ।

স্টেশন সুপার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো অবস্থায় বিনা টিকিটে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা ঘটনাটিতে ঔদ্ধত্যপনা দেখিয়েছেন। কাজটি মোটেও ঠিক হয়নি। এত বড় একজন কর্মকর্তা আইনের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাঁরা মারধরে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।

দিনাজপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল হক ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

দিনাজপুর আরএনবির ইনচার্জ সারওয়ার হোসেন বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় আরএনবিসহ রেল কর্মচারীরা যৌথভাবে মানববন্ধনসহ কর্মবিরতি পালন করবেন।