চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অব্যাহত আছে: জামায়াতের আমির

জাতীয় সংসদে পিআর পদ্ধতি চালুসহ পাঁচ দফা দাবিতে চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল। এতে বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। আজ বেলা সাড়ে ৩টায় লালদীঘি মাঠেছবি : প্রথম আলো

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অব্যাহত আছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে।

আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ফ্যাসিবাদকে নতুন করে দাঁড়াতে দেয়া হবে না। তারা রাস্তাঘাট ও দালান তৈরি করেছিল রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। শাপলা চত্বরে অসংখ্য মাওলানাকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বলেছিল, রং দিয়ে শুয়ে ছিল। তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল, রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে।

জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। সেই আকাঙ্ক্ষার বিজয় হবে কোরআনের মাধ্যমে। এটা প্রমাণিত হয়েছে, এর বাইরে গিয়ে কোনো কিছু দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম থেকে ইসলামের বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে কোরআনের বাংলাদেশ।’

বিগত সরকারের সময়ের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতন ও অবিচারের শিকার হয়ে কোথাও সামান্যটুকু বিচার পায়নি। বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ভেসে গিয়েছিল। দেশের টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করা হয়েছিল। ১ নয়, ২ নয়, ২৮ লাখ কোটি টাকা...ফ্যাসিবাদীরা আমাদের উন্নয়নের গল্প শোনাত। বলত, বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ এখন কানাডা। হ্যাঁ, বাংলাদেশ কানাডা হয়েছে তাদের জন্য। কারণ, তারা পালিয়ে গিয়ে কানাডায় বেগমপাড়া তৈরি করেছে। বাংলাদেশের টাকা লুট করে সিঙ্গাপুরে গিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে।’

জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালুসহ পাঁচ দাবিতে এ সমাবেশ হয়। জামায়াত ছাড়া অন্য দলগুলো হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। আজ জুমার নামাজের আগ থেকেই নগরের কোতোয়ালি, সিনেমা প্যালেস মোড় ও আন্দরকিল্লা মোড়সহ আশপাশের এলাকায় আট দলের কয়েক হাজার নেতা–কর্মী অবস্থান নেন।

সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ টি এম আজহারুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির সরওয়ার কামাল আজিজী, জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ব্রিটিশ এই দেশ থেকে চলে গেলেও ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধেও বৈষম্য দূর হয়নি। সেই থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যারা শাসক ছিল, তারা বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। আগামী দিনে আবারও চাঁদাবাজ ও জালিমদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে বৈষম্য থাকবে না।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘বনেদিদের বাংলাদেশ আর থাকবে না। অনেক দল থেকে আসন সমঝোতার অফার দেওয়া হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশের অধিকার মালিকানা কায়েম করতে চাই। ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি “হ্যাঁ” ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমির আবদুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আলাউল্লাহ আমিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আলী উসমান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আহসানুল্লাহ ভূঁইয়া, শাহজাহান চৌধুরী প্রমুখ।