মাগুরায় শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মাগুরার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি শিশু ভর্তি থাকছে।
হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা রয়েছে ১০। ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হলেও এসব শিশুর বেশির ভাগের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডে রোগী ও স্বজনদের চাপে পা ফেলার জায়গা নেই। শয্যাসংকটের কারণে বেশির ভাগ রোগী মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। সে সময় রোগী ভর্তি ছিল ১৫২ জন। এর মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্ত ৩২ জন। ঠান্ডা–জ্বর নিয়ে ভর্তি ৫৬টি শিশু। আর পাতলা পায়খানা ও কলেরায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৪৪। এর মধ্যে ৫০ জন রোগী শয্যা পেয়েছে। বাকিরা মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে।
শিশু বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ১০ নভেম্বরের পর থেকে শিশু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ে। পুরোপুরি শীত পড়ে গেলে রোগীর সংখ্যা কমে আসে।
সদর উপজেলার বেরইল পলিতা গ্রাম থেকে তিন মাসের মেয়েকে নিয়ে এসেছেন লুবনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘রোববার বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। মেয়ের চার দিন ধরে জ্বর আর দুই দিন ধরে পাতলা পায়খানা। ডাক্তার ভর্তি করে দিয়েছেন। এখনো মেয়ের অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি।’
একই অবস্থা শহরতলির আবালপুর গ্রামের বাসিন্দা রত্না খাতুনের সাত মাস বয়সী মেয়ে নুজাফার। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাত দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শিশুটি। রত্না খাতুন বলেন, ‘সাত দিনেও নিউমোনিয়া ঠিক হচ্ছে না। মেয়ে সব সময় কেঁদেই যাচ্ছে। দিনে একবার ডাক্তার আসেন। বুঝতে পারছি না কী করব।’
হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে একজন চিকিৎসক আসেন। এরপর খুব জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে সাধারণত আর চিকিৎসকদের পাওয়া যায় না। বাকি সময় নার্সদের ওপরই নির্ভর করতে হয়।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ নার্স প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকের তীব্র সংকট। সব সময় সেবা দেওয়ার মতো চিকিৎসক হাসপাতালে নেই। বিশেষ করে রাতের বেলায় হাসপাতালের চার শতাধিক রোগীর ভরসা জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক। ফলে সব চাপ এসে নার্সদের ওপর পড়ে। অনেক সময় রোগীর স্বজনেরা বিরক্ত হয়ে নার্সদের বকাঝকা করেন।’
জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) তানভির ইসলাম বলেন, ‘রোগীর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। ঠান্ডা, জ্বর, নিউমোনিয়া ও কলেরায় আক্রান্ত শিশু বেশি দেখা যাচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি সব রোগী যেন ঠিকমতো সেবাটা পায়।’
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার কার্যালয় ও শিশু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে প্রশাসনিক অনুমোদনের মাধ্যমে ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়, যার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। তবে নতুন দেড় শ শয্যার জনবল ও অর্থনীতিক অনুমোদন এখনো পাওয়া যায়নি। ফলে ১০০ শয্যার বরাদ্দ দিয়েই সব রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা বিকাশ কুমার শিকদার বলেন, শিশু ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন রোগীর সংখ্যা অন্য সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। ১০০ শয্যার জনবল নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।