কচুরিপানা সংগ্রহ করে দৈনিক ২ হাজার টাকা আয়
দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কৃষিকাজ, ধান কাটা ও মাটি কাটা শ্রমিকের কাজ করতেন রফিকুল ইসলাম (৪০)। হাতে কাজ না থাকলে বেকার বসে থাকতেন। এক যুগ আগে স্থানীয় এক মাছের খামারি দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে তাঁকে ক্ষুদ্র কচুরিপানা সংগ্রহের কাজ দিয়েছিলেন। তিনি জানতে পারেন, কচুরিপানা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য। এর পর থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে বিভিন্ন মাছের খামারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন রফিকুল ইসলাম।
মো. রফিকুল ইসলামের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামে। ১২ বছর ধরে কচুরিপানা সংগ্রহ করে মাছের খামারে বিক্রি করছেন তিনি। প্রতি বস্তা কচুরিপানা তিনি ৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। যানবাহনের ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে এতে তাঁর দৈনিক আয় ২০০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।
বড় বিল, পুকুর, নিচু জমির আবদ্ধ জলাশয়ে সবুজ ও বাদামি রঙের খুব ছোট আকারের কচুরিপানা ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়ভাবে সেগুলোকে ‘খুদে পেনা’ বলা হয়। অনেক সময় বিপুল পরিমাণ কচুরিপানা পুকুর বা নিচু জমির জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তখন অনেকেই কচুরিপানা তুলে ফেলে দিতে বাধ্য হন। এমন ফেলনা কচুরিপানা সংগ্রহ করে রফিকুল ইসলাম সংসার চালান।
শ্রীপুর পৌর শহরের ফালু মার্কেট এলাকার একটি নিচু জলাশয়ে গত সোমবার সকালে ক্ষুদ্র কচুরিপানা সংগ্রহ করছিলেন রফিকুল। কলাগাছের শুকনা পাতার মাঝের শক্ত অংশ একটির সঙ্গে আরেকটি বেঁধে লম্বা দড়ির মতো বানিয়েছেন। সেটি পানির বেশ কিছু জায়গাজুড়ে ভাসিয়ে দেন। এরপর দুই প্রান্ত ধরে ভাসমান ক্ষুদ্র কচুরিপানাগুলো পায়ের কাছাকাছি এনে আটকে রাখেন। মাছ ধরার ঠেলা জাল দিয়ে আটকে রাখা অংশ থেকে ক্ষুদ্র কচুরিপানাগুলো তুলে বস্তাবন্দী করেন তিনি।
জলাশয়ের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। শোনালেন পেশা শুরুর গল্প। কৃষিকাজ, ধান কাটা, মাটি কাটা বা অন্য কাজ না থাকলে তিনি বেকার বসে থাকতেন। ২০১০ সালে বরমী এলাকার একজন মাছের খামারি তাঁকে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ক্ষুদ্র কচুরিপানা সংগ্রহের কাজ দেন। এরপর জানতে পারেন কচুরিপানা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাথায় ভাবনা আসে নিজেই কচুরিপানা সংগ্রহ করে বিক্রি করবেন। এরপর শ্রীপুরের বিভিন্ন মাছের খামারে যোগাযোগ করেন। সবাই তাঁর কাছ থেকে কচুরিপানা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর পর থেকে তিনি সপ্তাহে তিন-চার দিন ক্ষুদ্র কচুরিপানা সংগ্রহ করে বিক্রি করেন।
রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে তিন-চার ঘণ্টা পরিশ্রম করলে ৫০ থেকে ৬০ বস্তা কচুরিপানা সংগ্রহ করা যায়। জলাশয় থেকে ভাসমান ক্ষুদ্র কচুরিপানা সংগ্রহের পর বস্তাগুলো ভ্যান বা অন্য যানবাহন ভাড়া করে খামারমালিকের খামারে পৌঁছে দেন। প্রতি বস্তা কচুরিপানা ৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। যানবাহনের ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ২০০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা আয় করতে পারেন।
রফিকুল বললেন, পরিশ্রম করতে পারলে কচুরিপানা বিক্রি করে একটি সংসার খুব ভালোভাবে চলতে পারে। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। তবে রফিকুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে নিচু জমি থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় অনেকেই টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়। ফলে লাভও কম হয়।
শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের গোলাঘাট গ্রামের মাছের খামারি মো. আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, রফিকুলের ব্যতিক্রমী এ পেশা তাঁর নিজের সংসারের চাকা যেমন ঘোরাচ্ছে, তেমনি মৎস্য খামারগুলো পাচ্ছে প্রাকৃতিক খাবারের জোগান।
শ্রীপুর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা ওয়াহিদুল আবরার প্রথম আলোকে বলেছেন, ক্ষুদ্র কচুরিপানা কার্পজাতীয় মাছের খাবার। এই খাবারগুলো খামারের মাছের বৃদ্ধি ও শারীরিক সুস্থতার জন্য সহায়ক। কচুরিপানা সংগ্রহ করে আয়ের বিষয়টি উৎসাহব্যঞ্জক।