বিরামপুরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একজনকে হত্যার মামলায় ছাত্রলীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা রিপন মণ্ডল (বাঁয়ে) ও হাবিবুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের বিরামপুরে রশিদুল ইসলাম (২৫) হত্যা মামলায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার ভোরে নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক এ তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন মণ্ডল (২৮) এবং পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক হাবিবুর রহমান (২৪)। রিপন খানপুর ইউনিয়নের কালিশহর গ্রামের মৃত দিলীপ মণ্ডলের ছেলে। হাবিবুর পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের চক হরিদাসপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তাঁরা হত্যা মামলাটির এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাঁদের গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

গত বছরের ২৫ অক্টোবর বিপ্লব আলম ওরফে বিলু (৪৭) নামের একজন বিএনপির কর্মী বাদী হয়ে রশিদুল ইসলামকে হত্যার অভিযোগে বিরামপুর থানায় এই মামলা করেন। এতে ১১৩ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলার বাদী বিপ্লব আলম উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের উত্তর দাউদপুর গ্রামের মৃত সাহের উদ্দিন সরকারের ছেলে।

দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিককে এই হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন কাটলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী মণ্ডল, খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান নিহার রঞ্জন পাহান, পলিপ্রয়াগপুর ইউপি চেয়ারম্যান রহমত আলী, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মেজবাউল ইসলাম মণ্ডল, সাবেক পৌর মেয়র লিয়াকত আলী সরকার ওরফে টুটুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলজার হোসেন ওরফে ঝড়ু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশিদ, যুবলীগের উপজেলা শাখার সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম ওরফে বকুল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম ওরফে মানিক প্রমুখ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর কাটলা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউনুছ আলী মণ্ডল নৌকা প্রতীকে এবং বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী নাজির হোসেন আনারস প্রতীকে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে দক্ষিণ কাটলার ধানহাটি এলাকার মৃত নূরুল হুদার ছেলে রশিদুল ইসলাম আনারস প্রতীকের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। নির্বাচনে ইউনুছ আলী মণ্ডল নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। পরে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি বেলা তিনটায় কাটলা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী মণ্ডলের পক্ষে সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে আনারস প্রতীকের কর্মী রশিদুল ইসলাম কাটলাবাজারে অবস্থান করছেন—এমন একটি সংবাদ নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী মণ্ডল মঞ্চে থাকা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিবলী সাদিককে দেন। এ সময় শিবলী সাদিক বাজারে অবস্থান করা রশিদুল ইসলামকে ধরে আনার নির্দেশ দেন। পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ও মামলার ৩৩ জন আসামি ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কাটলাবাজারের খাদ্যগুদামের সামনে থেকে রশিদুল ইসলামকে ধরে অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে আসেন। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের নির্দেশে আসামিরা অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল নির্মাণের কাজে পড়ে থাকা বাঁশের লাঠি ও রড দিয়ে রশিদুল ইসলামের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেন। এতে রশিদুল ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

বিরামপুর থানার ওসি মমতাজুল হক বলেন, গত বছর বিরামপুর থানায় একটি হত্যা মামলার তদন্তের পর সংশ্লিষ্টতা আসায় আজ ভোরে রিপন মণ্ডল ও হাবিবুর রহমান নামের নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের আজ দুপুরে দিনাজপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।