জন্মদিনেই জাদুঘরে উন্মুক্ত হলো কাঙাল হরিনাথের ঐতিহাসিক সেই মুদ্রণযন্ত্র

কুষ্টিয়া কুমারখালী কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরে দেশের প্রথম মুদ্রণযন্ত্র। আজ এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

আজ ২০ জুলাই গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ১৯০তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে তাঁর ব্যবহৃত ও দেশের প্রথম মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাযন্ত্রটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরে মুদ্রণযন্ত্রটি উন্মুক্ত করা হয়। ফিতা কেটে ঢেকে রাখা কাপড় সরিয়ে এর উন্মোচন করেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ।

জাদুঘরের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ওবাইদুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কাঙাল হরিনাথের পরিবারের সদস্য গীতা মজুমদার, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ আল মাছুম মুর্শেদ, ব্যবসায়ী মাসুদ রানা, কাঙাল হরিনাথ প্রেসক্লাবের সভাপতি কে এম আর শাহিন।

জাদুঘরের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ওবাইদুল্লাহ জানান, ঐতিহাসিক মুদ্রণযন্ত্রটি জাদুঘরে নেওয়ার জন্য গত শনিবার ঢাকার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে বোর্ড সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিনামা স্বাক্ষর করা হয়। ২০ লাখ টাকার চেক ও দুজনের চাকরির বিনিময়ে কাঙাল হরিনাথের পরিবারের কাছ থেকে মুদ্রণযন্ত্রটি জাদুঘরে নেওয়ার চুক্তি হয়। হস্তান্তর চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন কাঙাল হরিনাথের চতুর্থ বংশধরের স্ত্রী গীতা মজুমদার ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। এরপর ঐতিহাসিক মুদ্রণযন্ত্রটি গত মঙ্গলবার গীতা মজুমদারের বাড়ি থেকে জাদুঘরে আনা হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শেষে যন্ত্রটি জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় একটি স্থানে রাখা হয়। আজ দুপুর থেকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

সে সময় কলকাতা ছাড়া কোথাও মুদ্রনযন্ত্র ছিল না। কলকাতা থেকে সংবাদপত্র ছাপিয়ে গ্রামগঞ্জে এনে হরিনাথ যেন অসাধ্য সাধন করেছিলেন। তাঁর জীবনে কখনো সচ্ছলতা ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও পত্রিকা প্রকাশের সুবিধার্থে তিনি ১২৯২ বঙ্গাব্দে (১৮৭৩ ইংরেজি) একটি ছাপাখানা (মুদ্রনযন্ত্র) স্থাপন করেন।
কাঙাল হরিনাথের ব্যবহৃত ঐতিহাসিক মুদ্রণযন্ত্রটি উন্মোচন করেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। আজ দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরে
ছবি: প্রথম আলো

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, কাঙাল হরিনাথ মজুমদার দেশের প্রথম গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। তিনি ছিলেন একজন প্রজাবান্ধব ও প্রতিবাদী মানুষ। তাঁর মুদ্রণযন্ত্রটি ঐতিহাসিক। এত দিন সেটি তাঁর পরিবারের কাছে ছিল। এখন থেকে জাদুঘরে যে কেউ এলে সেই মুদ্রণযন্ত্রটিও দেখতে পারবে। এটি কুমারখালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে।

বিকেলে জাদুঘরের মিলনায়তনে কাঙাল হরিনাথের জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হয়। সেখানে গান, কবিতা, আবৃত্তি ও আলোচনা সভা হয়।

সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ বাংলা ১২৪০ সালের (১৮৩৩ ইংরেজি) ৫ শ্রাবণ কুষ্টিয়া জেলার (তৎকালীন নদীয়া জেলা) কুমারখালী উপজেলার কুণ্ডুপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য এবং তাঁদের ওপর শোষণ-পীড়নের বিরুদ্ধে তিনি সারা জীবন আন্দোলন করেছেন। অত্যাচারিত ও অসহায় কৃষক সম্প্রদায়কে রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় লিখতেন। পরে ১২৭০ বঙ্গাব্দে (১৮৬৩ ইংরেজি) তিনি নিজেই ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ নামের একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি পরে পাক্ষিক ও ১২৭৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস থেকে এক পয়সা মূল্যের সাপ্তাহিকে রূপান্তরিত হয়। এতে সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও কৃষকদের প্রতি তখনকার নীলকর ও জমিদারদের শোষণ-অত্যাচারের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হতো।

সে সময় কলকাতা ছাড়া কোথাও মুদ্রনযন্ত্র ছিল না। কলকাতা থেকে সংবাদপত্র ছাপিয়ে গ্রামগঞ্জে এনে হরিনাথ যেন অসাধ্য সাধন করেছিলেন। তাঁর জীবনে কখনো সচ্ছলতা ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও পত্রিকা প্রকাশের সুবিধার্থে তিনি ১২৯২ বঙ্গাব্দে (১৮৭৩ ইংরেজি) একটি ছাপাখানা (মুদ্রনযন্ত্র) স্থাপন করেন। রাজশাহীর রানি স্বর্ণকুমারী দেবীর অর্থানুকূল্যে পত্রিকা প্রকাশের পর বেশ কয়েকবার অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বন্ধুদের অর্থ সাহায্যে পত্রিকাটি সাময়িক রক্ষা পায়। তবে ১২৯২ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে (১৮৮৫ ইংরেজি) পত্রিকাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।