বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেতৃত্ব পেল শাজাহানপুর বিএনপি

বগুড়া জেলার মানচিত্র

দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে দীর্ঘ ১৩ বছর পর বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে উপজেলা সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে চুপিনগর উচ্চবিদ্যালয়ে এ সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়।

এর আগে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ‘ভুঁইফোড়দের নিয়ে পকেট কমিটি’ গঠিত হতে যাচ্ছে অভিযোগ তুলে সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেন উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতা–কর্মীরা। এতে করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এনামুল হক সভাপতি, আবদুল হাকিম ১ নম্বর সহসভাপতি, আজিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদক, হাজে উদ্দিন ও আবু সায়েম সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম ওরফে বাদশা। সম্মেলন সফল হয়েছে দাবি করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নেতা–কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল।

এর আগে উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতারা গত মঙ্গলবার বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। অভিযোগ তুলে তাঁরা বলেন, ‘পকেট কমিটি’ করতে উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে এনামুল হকের বাড়িতে সম্মেলন আয়োজন করা হয়। ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের এজেন্ট সুযোগসন্ধানীদের নিয়ে কাউন্সিলর তালিকা করা হয়েছে। প্রতিবাদে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা একযোগে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ সময় তাঁরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আট দফা দাবি তুলে ধরেন।

শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবুল বাশার বলেন, উপজেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে। তাই এবারের সম্মেলন নেতা–কর্মীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে হতাশ তাঁরা।

‘বিদ্রোহী’ অংশের নেতাদের দাবি, এই উপজেলায় ‘তারেক মডেল’ অনুসরণ করে ওয়ার্ড থেকে উপজেলা পর্যন্ত প্রতিটি ইউনিটে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা ছিল। কিন্তু ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে সম্মেলন না করেই ঘরে বসে ‘পকেট কমিটি’ করা হয়েছে। এ নিয়ে সাত দফা সংঘর্ষ হয়েছে। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে আড়িয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আলহাজ টুকুকে বিএনপির একটি ইউনিয়নের কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক, যুবলীগ কর্মী আবদুল বাসেদ ওরফে রঞ্জুকে ইউনিয়ন কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও যুবলীগ কর্মী সাজ্জাদ হোসেনকে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। এভাবে প্রতিটি ইউনিয়নে বিতর্কিত কমিটি করা হয়েছে। ২২টি নাশকতার মামলায় তিনবার জেলে যাওয়া জেলার এক নেতাকে সভাপতি পদ থেকে বঞ্চিত করতে গত ১৭ আগস্ট হঠাৎ দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি আলী হায়দার বলেন, দলে ভুঁইফোড় ও আওয়ামী এজেন্টদের নিয়ে করা কাউন্সিলর তালিকা দেখে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন অনেকে।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রমৈত্রীর সাবেক নেতা এনামুল হকের হাতে শাজাহানপুর বিএনপির নেতৃত্ব তুলে দিতে শুরু থেকেই জেলা বিএনপির কতিপয় নেতা কূটকৌশল চালিয়ে আসছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল করিম ওরফে বাদশা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে শর্ত দেওয়া হয়, মহাসড়কের আশপাশে সম্মেলন করা যাবে না। বাধ্য হয়েই চুপিনগর উচ্চবিদ্যালয়ে সম্মেলন করা হয়েছে। কাউন্সিলর তালিকা তৈরিতে কোনো অনিয়ম হয়নি। নিজেদের সমর্থন না থাকার কারণে কয়েকজন সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেন।