দেড় ফুট জমি নিয়ে বিরোধে হাত–পায়ের রগ কেটে কৃষককে হত্যা

কুপিয়ে হত্যা
প্রতীকী ছবি

একজনের জমির পাশেই অন্যজনের জমি। নিজের জমিতে দেড় ফুট জায়গা কম আছে দাবি করে কয়েকবার সালিসও করেন সায়েদুল ইসলাম ওরফে হাসু। আগামী মঙ্গলবারও সালিস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই সালিসের আগেই হাত–পায়ের রগ কেটে ও ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে প্রতিপক্ষের কৃষককে সায়েদুল ও তাঁর সহযোগীরা হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

খুন হওয়া ওই কৃষকের নাম খুরশেদ মিয়া (৫০)। তিনি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার  সানন্দখিলা গ্রামের মৃত আবদুল হকের ছেলে। এ ঘটনায় তাঁর ছেলে মোফাজ্জল মিয়া বাদী হয়ে শনিবার রাতে ধোবাউড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামি বাবুল মিয়া, সারোয়ার হোসেন ও প্রিয়তোষ দাশকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা জানান, গত শুক্রবার রাতে স্থানীয় মুন্সিরহাট বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে চন্ডিরকান্দা গ্রামের চারিয়াকান্দা ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় হঠাৎ কয়েকজন লোক খুরশেদ মিয়া ও তাঁর বন্ধু গণি মিয়ার ওপর হামলা চালায়। এই সময় ধারালো অস্ত্রের কোপে খুরশেদ মিয়ার ডান হাতের কবজি কেটে মাটিতে পড়ে যায়। এরপর হামলাকারীরা  খুরশেদের দুই পা ও হাতের রগ কেটে ফেলে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় খুরশেদ মিয়া ও গণি মিয়াকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে খুরশেদকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

খুরশেদ মিয়ার ছেলের শ্বশুর শফিক তালুকদার বলেন, মাত্র দেড় ফুট জায়গা নিয়ে খুরশেদের মঙ্গে তাঁর প্রতিবেশী সায়েদুল ইসলামের বিরোধ ছিল। বছর দেড়েক আগেও এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে সালিস করে জমি মাপা হয়, কিন্তু সায়েদুল জমি পাননি। এর মধ্যে কয়েক দিন ধরে সায়েদুলের জমির পাশে খুরশেদের জমিতে তাঁর দেড় ফুট জমি চলে গেছে দাবি করলে আগামী মঙ্গলবার সালিসের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তার আগেই হত্যা করা হয়েছে খুরশেদকে।

শফিক তালুকদার আরও বলেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড এই এলাকায় আগে কখনো হয়নি। একটি হাতের কবজি কেটে নেওয়া হয়েছে। হাত–পায়ের রগ কাটা হয়েছে। অণ্ডকোষ কেটে ফেলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার রাতে খুরশেদের লাশ কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।  

খুরশেদের ছেলে মোফাজ্জল মিয়া বলেন, ‘আমাদের কাছে জমি না পেলেও অহেতুক চাপ দিচ্ছিলেন সায়েদুল। আমার বাবা সবকিছুতেই রাজি ছিল। সালিসে যে সিদ্ধান্ত হতো, তাই মেনে নিত। কিন্তু আমার বাবাকে ওরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যায় জড়িতদের ফাঁসি চাই।’

এই বিষয়ে ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. চান মিয়া বলেন, জমি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ ছিল। আগামী মঙ্গলবার সালিস বৈঠকের মাধ্যমে কাগজপত্র দেখে আসামিপক্ষকে কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনাটি ঘটানো হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে রোববার আদালতে সোপর্দ করা হয়। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।