প্রয়াত সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ওরফে ডিলুর পরিবারে আবারও বিভক্তি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। ইতিমধ্যে তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে, জামাতাসহ ছয়জন পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। এতে পরিবারটিতে বিভক্তির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করেছেন নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা চলছে।
আজ রোববার ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মুরাদ আলী ছয়জনের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়ন দৌড়ে পরিবারটির মধ্যে চরম বিরোধ তৈরি হয়েছে। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলেন না। এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, যাঁরা পরিবারের মধ্যে ঐক্য রাখতে পারেন না। তাঁরা দলের ঐক্য কীভাবে ঠিক রাখবেন?’
মনোনয়ন ফরম তোলা ছয়জন হলেন প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফের বড় ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গালিবুর রহমান শরীফ, মেজ ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাকিবুর রহমান শরীফ, মেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহজেবিন শিরিন, জামাতা (মাহজেবিনের স্বামী) ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, খালাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বশির আহম্মেদ ও ভগ্নিপতি (খালাতো বোনের স্বামী) উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা।
জানতে চাইলে মাহজেবিন শিরিন বলেন, ‘আমাদের পারিবারিক কোনো বিরোধ নেই। আমরা ভাইবোন সবাই রাজনীতি করি, তাই মনোনয়ন চাইতেই পারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, তাঁর পক্ষে আমরা কাজ করব।’
আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, সংসদীয় আসনটিতে প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ১৯৯৬ সাল থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফলে এলাকায় শরীফ পরিবারের ব্যাপক প্রভাব তৈরি হয়। ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
এতে পরিবারটির প্রভাব আরও বেড়ে যায়। ২০২০ সালে শামসুর রহমান শরীফ মারা যান। এর পর থেকে পৃথকভাবে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন পরিবারের সদস্যরা। পরে উপনির্বাচনে শামসুর রহমান শরীফের স্ত্রী কামরুন্নাহার, দুই ছেলে, মেয়ে, জামাতাসহ পরিবারের সাতজন মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। সেই থেকে বিভক্তি শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেও বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়। ফলে মনোনয়নবঞ্চিত হয় পরিবারটি। ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু হাল ছাড়ে না শরীফ পরিবার।
আবারও মনোনয়ন প্রত্যাশায় তারা পোস্টার-ব্যানার টাঙিয়ে ও মিছিল–মিটিং করে প্রচার শুরু করে। বাড়ির সামনেও দেখা যায়, মনোনয়ন প্রত্যাশা করে দুই ভাইয়ের পৃথক বিলবোর্ড টাঙানো। এতে পরিবারটির সঙ্গে দলের মধ্যেও চরম বিভক্তি তৈরি হয়, যা প্রকাশ্য রূপ নেয় পরিবারের ছয় সদস্যর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে।
মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী সাকিবুর রহমান শরীফ বলেন, ‘বাগানে শত ফুল ফুটবে। এর মধ্যে সেরাটা বেছে নেবেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এখানে কোনো গ্রুপিং নেই, প্রতিযোগিতা আছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার ভাষ্য, গালিবুর রহমান শরীফ লন্ডনে থাকতেন। বাবা জীবিত থাকতে তিনি তেমন দেশে আসেননি। বাবার মৃত্যুর পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন। অপর ছেলে সাকিবুর রহমান শরীফ মনোনয়ন প্রত্যাশা করার পর থেকে মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। মেয়ে মাহজেবিন শিরিন বাবা জীবিত থাকাকাল থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা, পৌরসভা ও জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি কোনো পরিবারের পরিচয়ে রাজনীতি করি না। ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে আওয়ামী লীগে এসেছি। ঈশ্বরদী পৌরসভায় মেয়র হয়েছি। দলীয় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। নিজের পরিচয়েই আমার মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।’
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক বলেন, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তিন ভাইবোন জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে আছেন। মনোনয়ন সবাই চাইতে পারেন। তবে একই পরিবার থেকে এতজনের মনোনয়ন প্রত্যাশা শোভনীয় নয় বলে মনে হয়।