নিতাই রায় চৌধুরীর সাক্ষাৎকার

‘আওয়ামী লীগ নিজেরা নাশকতা করে অন্যদের ওপর দায় চাপায়’

মামলার চাপে কোণঠাসা মাগুরা জেলা বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে মাগুরায় দলটির অবস্থা নড়বড়ে। আছে কোন্দলও। এক দশক ধরে উন্মুক্ত মাঠে সমাবেশ করতে পারেননি নেতা-কর্মীরা। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে একরকম মাঠছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে ৭ জানুয়ারি হতে যাওয়া নির্বাচনে বিএনপি কী করবে, তাদের কৌশল কী হবে—এসব নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর সঙ্গে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত
প্রশ্ন:

জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কৌশল কী?

নিতাই রায় চৌধুরী: আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। আমরা মনে করি, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে সেটা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে না। কৌশল তো বলার বিষয় না, এটা সময়ের সঙ্গে দেখতে হয়।

প্রশ্ন:

বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠছাড়া, এমন পরিস্থিতিতে চলমান এক দফা আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী?

নিতাই রায় চৌধুরী: মাঠছাড়া এটা বলা যাবে না। সবাই মাঠেই আছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে হাজার হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে। কেউ বাড়িতে থাকতে পারছে না, রাতে মাঠে-ঘাটে ঘুমাতে হচ্ছে। এত অত্যাচার-নির্যাতনের পরও উল্লেখযোগ্য কেউ দল ত্যাগ করেননি। ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে ৮০ ভাগের বেশি মানুষ এই সরকারের ওপর অতিষ্ঠ। তারা আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা মনে করি পরিস্থিতি বদলাবে।

প্রশ্ন:

গত ১০ বছরে মাগুরায় জেলা বিএনপি খোলা মাঠে কোনো সমাবেশ করতে পারেনি। মাগুরা জেলা বিএনপি কি ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে?

নিতাই রায় চৌধুরী: গত কয়েক মাসে মাগুরা, মহম্মদপুর, শালিখায় বড় বড় মিছিল হয়েছে। সমাবেশ হয়েছে। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ হামলা করেছে। একটা দেশে যখন ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন বিরোধী মত দমন করতে পুলিশ, প্রশাসন, আদালত থেকে শুরু করে সব রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। ফলে এগুলো (বিএনপি দুর্বল হচ্ছে) কোনো কথা না। বরং বিএনপি ক্রমেই শক্তিশালী হয়েছে।

প্রশ্ন:

২০১৬ সালের পর থেকে মাগুরা জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে। সদর ও শ্রীপুর উপজেলার পাশাপাশি পৌরসভায় বিএনপির কমিটি চলছে একজন নেতা দিয়ে। তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে সাংগঠনিক এমন দুর্বল অবস্থা। আপনি কী মনে করেন?

নিতাই রায় চৌধুরী: আন্দোলন–সংগ্রামের সময় অটোমেটিক একটা ঐক্য হয়ে যায়। কিছু কিছু সমস্যা তো আছে; যেটা সরকারি দল, বিরোধী দল সবার মধ্যেই আছে। এমন বিরোধে অনেক সময় রাজনীতির বিকাশ ঘটে। এখন আমাদের সংগঠন গোছানোর সময় না।

প্রশ্ন:

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, আসন্ন নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি নাশকতা করছে। এ কারণেই তাঁদের নামে মামলা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

নিতাই রায় চৌধুরী: ওরা মিথ্যা বলে। আমরা নির্বাচন বানচাল করতে কেন চাইব? আমরা তো দেশের জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করছি। আওয়ামী লীগ নিজেরা নাশকতা করে অন্যদের ওপর দায় চাপায়।

প্রশ্ন:

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান মাগুরার দুটিসহ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। কীভাবে দেখছেন?

নিতাই রায় চৌধুরী: সাকিব আল হাসান মাগুরা ও বাংলাদেশের গর্ব। তাঁর খেলা নিয়ে আমরা গর্বিত। কিন্তু সাকিব আল হাসান রাজনীতির মাঠে ডুবন্ত নৌকায় কেন উঠতে যাচ্ছেন, আমি বুঝতে পারছি না। তিনি তো আগে রাজনীতি করতেন না। আগে তো আওয়ামী লীগ করতেন না, ছাত্রলীগ করতেন না। নতুন রাজনীতিতে নাম লেখালেন। তিনি একটা ডুবন্ত নৌকায় যাত্রী হতে যাচ্ছেন। তিনি খেলার মধ্যে থাকলেই ভালো হতো।