চিকিৎসক দম্পতির বাসা থেকে গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার, নির্যাতনের অভিযোগ পরিবারের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে তামান্নার স্বজনদের ভিড়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক চিকিৎসক দম্পতির বাসা থেকে তামান্না আক্তার (১৪) নামের এক কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নিস্তেজ অবস্থায় ওই কিশোরীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। চিকিৎসক ওই কিশোরীকে মৃত ঘোষণা করেন। তামান্নার বাবা-মায়ের অভিযোগ, তাঁদের মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসক দম্পতি প্রায়ই নির্যাতন করতেন।

তামান্না কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা মো. সুমন মিয়া ও মুন্নি আক্তার দম্পতির বড় মেয়ে। সুমন মিয়া স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘর এলাকায় বাবুল মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। সেই সূত্র ধরে তামান্নাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌলভীপাড়ায় বাবুল মিয়ার মেয়ে ইসরাত আহমেদ ও জামাতা আনিসুল হকের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে দেওয়া হয়েছিল। ইসরাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খ্রিষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক।

আরও পড়ুন

তামান্নার পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে চিকিৎসক ইসরাতের বাবা বাবুল মিয়া ঢাকা থেকে সুমন মিয়াকে ফোন করে জানান, তামান্না গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রয়েছে। পরে সুমন তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মেয়ের লাশ দেখতে পান। তাঁদের সামনেই হাসপাতালের লোকজন তামান্নার লাশ মর্গে নিয়ে যান।

সুমন মিয়া কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে যদি আত্মহত্যা করে থাকে, তাহলে তার লাশ নামানোর আগে আমাদের জন্য অপেক্ষা করত। কারণ, ভাদুঘর থেকে মৌলভীপাড়া যেতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগার কথা। কিন্তু তারা লাশ নিজেরাই হাসপাতালে নিয়ে গেছে।’ সুমন মিয়া বলেন, ‘ কয়েক দিন আগে মেয়ে জানিয়েছে যে তাঁরা (চিকিৎসক দম্পতি) মেয়েকে প্রায়ই মারধর করতেন। তাঁরা মেয়েকে নির্যাতন করতেন। তাঁরা আমার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন।’ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুধবার তিনি থানায় গিয়ে হত্যা মামলার আবেদন করবেন।

আরও পড়ুন

তামান্নার খালু আবদুল কাদের বলেন, চিকিৎসক দম্পতি ইসরাত ও আনিসুল আগে ঢাকায় থাকতেন। তামান্না তখন গৃহপরিচারিকা হিসেবে তাঁদের সঙ্গে ঢাকায় থাকত। দুই বছর আগে ওই চিকিৎসক দম্পতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে আসেন। এর পর থেকে তাঁদের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌলভীপাড়ার বাসায় থাকত তামান্না। তামান্নাকে মাসে তিন হাজার টাকা বেতন দিতেন তাঁরা।

তামান্নার মা আহাজারি করে চলেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে
ছবি: সংগৃহীত

তামান্নার মা মুন্নি আক্তার আহাজারি করে বলেন, ‘১০-১৫ দিন আগে মেয়ের সঙ্গে কথা হইছিল। তারা মেয়েকে মারধরসহ নির্যাতন করে, জানাইছিল মেয়ে। আমার কোল খালি কইরা মেয়ে চলে গেল। সে সময় মেয়ে বলছিল, “টাকার কাজ করতে পাঠাইছ। কাজ কইরা খাওয়াই দিয়া যামু।”’

সন্ধ্যা সাতটার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক ইসরাত আহমেদকে দেখা যায়। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে মুখ ঢেকে তিনি সেখান থেকে চলে যান। গণমাধ্যমকর্মীরা কথা বলতে চাইলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

আরও পড়ুন

ইসরাতের স্বামী চিকিৎসক আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘তামান্নার বাবা-মায়ের পর যদি এই ঘটনায় কেউ মর্মাহত হয়ে থাকেন, সেই ব্যক্তি আমরা। কারণ, সে আমার সন্তানকে দেখাশোনা করত। আমরা তাকে সন্তানের মতো আদর করতাম। আমার স্ত্রী কাজ শেষে বাসায় ফিরে তাকে এমন অবস্থায় দেখে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মির্জা মো. সাইফ বলেন, বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ওই কিশোরীকে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ির মালিক ওই গৃহপরিচারিকার লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন