‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই, পোলাপাইন জানে কীভাবে পিটাইতে হয়’

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র চিনে না। মাইরের ওপর কোনো ওষুধ নাই। পোলাপাইনও জানে কীভাবে পিটাইতে হয়। কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র ছাত্রলীগ মানে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কীভাবে পিটাইতে হয় হে ওই আমগরে শিখাইছে, হেরে আমরা হেমনেই পিটাইমু। এই আসনের কোনো এলাকায় তাঁদের জায়গা দেওয়া যাবে না।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-১ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এভাবেই পেটানোর হুমকি দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম ওরফে রিমন। আজ বুধবার দুপুরে নরসিংদী ক্লাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের মতবিনিময় সভায় তিনি এ হুমকি দেন। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও বিকেল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় নেতা হয়েও যাঁরা নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন, তিনি মনে করেন তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এ জন্য তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। নৌকাকে জেতাতে যা যা করার দরকার, তিনি তা–ই করবেন।

নরসিংদী-১ আসনে আজ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন চারজন। তাঁদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ আলী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র কামরুজ্জামান আছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ওই দুজনকে উদ্দেশ করে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে ওই মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হোসেন ভূঁইয়াসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, মতবিনিময় সভায় অনেকে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে ছাত্রলীগের সভাপতির দেওয়া বক্তব্য তিনি সমর্থন করেন না। বয়স বিবেচনায় তা পত্র-পত্রিকায় ছাপানো ঠিক হবে না। দিন শেষে তাঁরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভালো নির্বাচন করতে চান।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অপরিণত বয়সে কারও রাজনৈতিক বক্তব্যে অনেক সময় ভুল ও অনুচিত কথা চলে আসে। ছাত্রলীগ সভাপতির এমন বক্তব্য দেওয়া উচিত হয়নি। মানুষকে হুমকি-ধমকি ও ভয় দেখানো ব্যক্তিগতভাবে আমি পছন্দ করি না, সমর্থনও করি না।’

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান বলেন, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাধা না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখানে এমন বক্তব্য সাংঘর্ষিক। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তা ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বদিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, কেউ কোনো প্রার্থীকে হুমকি দিলে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়। এ ক্ষেত্রে যে প্রার্থীকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তিনি যদি লিখিত অভিযোগ দেন, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁরা এখনো কোনো অভিযোগ পাননি।