ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে রাখা ভুট্টার গাছ জ্বালিয়ে দিলেন এসি ল্যান্ড

ঠাকুরগাঁও জেলার মানচিত্র

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে স্থানীয় লোকজনের রাখা ভুট্টা ও ভুট্টার গাছ জ্বালিয়ে দিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ-আল-নোমান সরকার। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ভূমি কার্যালয়ের পাশে রয়েছে একটি গুচ্ছগ্রাম। গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা জানান, তাঁরা জমি বর্গা নিয়ে ফসল আবাদ করেন। তাঁদের ফসল মাড়াইয়ের জায়গা নেই; এ কাজে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে পাশের ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করেন। এবার খেত থেকে ভুট্টা কেটে ভূমি কার্যালয়ে পালা করে রেখেছিলেন। ভুট্টা সরিয়ে নেওয়ার সময় না দিয়ে সেগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)।

তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ-আল-নোমান সরকার দাবি করেছেন, তিনি গত বৃহস্পতিবার ভাতুরিয়া ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। তখন স্থানীয় লোকজনকে রোববারের মধ্যে ভুট্টা সরানোর নির্দেশনা দেন; কিন্তু সেগুলো সরানো হয়নি। গতকাল ভুট্টার দাবিদার না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে কিছু মালামাল পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আবদুল্লাহ-আল-নোমান সরকার বলেন, ‘এলাকার লোকজন ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের বারান্দাসহ বিভিন্ন জায়গায় গোবর ও ভুট্টার গাছ সংরক্ষণ করে আসছিলেন। এতে সেখানে কাজের পরিবেশ ছিল না। সব ভুট্টা জ্বালিয়ে দেওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল কিছু জ্বালিয়ে দিয়ে গোবর ও ভুট্টার গাছগুলো কারা সেখানে রেখেছেন, তাঁদের বের করা। বাকিগুলো জ্বালিয়ে দিতাম না, সেগুলো নিলাম করে বা অন্য কোনো উপায়ে বিক্রি করে দিতাম।’

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম ওই ভূমি কার্যালয়ে ভুট্টার গাছ রেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা কয়েকজন মিলে চারটি খামালে ভুট্টা ও ভুট্টার গাছ রেখেছিলেন। এর মধ্যে দুটি খামালের ভুট্টা এখনো ভাঙা হয়নি। গতকাল এসি ল্যান্ড লোকজন নিয়ে এসে সেসব ভুট্টা সরিয়ে নিতে বলেন। আমরা তাঁর কাছে এক দিনের সময় দাবি করি। কিন্তু তিনি তা না শুনে ভুট্টায় আগুন ধরিয়ে দেন।’

ভুট্টায় আগুন দেওয়ার কথা শুনে ভাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহজাহান সরকার সেখানে আসেন। এ সময় তিনি সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে ভুট্টা সরিয়ে নিতে কৃষকদের এক দিনের সময় দেওয়ার অনুরোধ করেন। শাহজাহান সরকার বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি ভুট্টার পালায় আগুন না দিতে তাঁর কাছে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমার কথা না শুনে ভুট্টার পালায় আগুন ধরিয়ে দিলেন। বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে তিনি (এসি ল্যান্ড) উত্তেজিত হয়ে আমাকে হুমকি দেন; বলেন, “ঠিক আছে আপনাকে আমার মনে থাকবে।”’

এ অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল্লাহ-আল-নোমান সরকার বলেন, ‘আমি তাঁকে কেন হুমকি দেব? আমি আইনের লোক। আমি যা করব, কাগজে–কলমে করব। চেয়ারম্যানের আচরণে মনে হয়েছে, সেই লোকজনের সঙ্গে তাঁর আর্থিক লেনদেন থাকতে পারে।’

এ বিষয়ে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ আবদুল্লাহ-আল-নোমান সরকার হরিপুর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে যোগদান করেন। এর আগে তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ছিলেন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া পাঁচ সাংবাদিককে নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ১৪ মার্চ সেখান থেকে তাঁকে বদলি করা হয়।