সত্য বলা এখন অনেক কঠিন। তারপরও প্রথম আলো ২৭ বছর ধরে সাহস নিয়ে এগিয়ে চলছে। জনগণের কথা, বিশেষ করে অবহেলিত মানুষের কথা তুলে ধরছে প্রথম আলো। এমন সাহসী সংবাদমাধ্যম আজকের সমাজে খুবই প্রয়োজন। প্রথম আলো সব সময় সাহসী ভূমিকায় থাকবে—এটাই সবার প্রত্যাশা।
মঙ্গলবার বিকেলে মাগুরায় প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। পত্রিকাটির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিকেল সোয়া চারটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, রাজনৈতিক নেতা, সাংস্কৃতিক কর্মী, উন্নয়ন কর্মী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।
সমাবেশে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের জেলা শাখার আহ্বায়ক শম্পা বসু বলেন, ‘আমরা এমন একটি সময় পার করছি, যখন সত্য প্রকাশ করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু প্রথম আলো সেই ঝুঁকি নিয়েও মানুষের কথা বলে যাচ্ছে। মাগুরার মতো জেলার খবরও তারা নিয়মিত তুলে ধরছে—এই ধারাবাহিকতা আরও বাড়ুক।’
কলেজশিক্ষক রুহুল আমীন বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রথম আলোর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। দেশের কঠিন সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও প্রথম আলো সংবাদ পরিবেশন চালিয়ে গেছে। এটাই তাদের শক্তি। দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুসংহত রাখতে আমরা প্রথম আলোর আরও সাহসী ভূমিকা প্রত্যাশা করি।’
অনুষ্ঠানে অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলের শীতকালীন ঐতিহ্যবাহী পিঠা পরিবেশন করা হয়। নাশতার সঙ্গে সঙ্গে চলে অতিথিদের গোল টেবিল আলোচনা। বন্ধুসভার সদস্য ফারহানা সুলতানার সঞ্চালনায় সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা সভাপতি মুফতি মোস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রথম আলো পাঠকদের অনেক চাহিদা পূরণ করে। আমরা চাই, এই পত্রিকায় আরও বেশি ইসলাম ধর্ম নিয়ে লেখা প্রকাশিত হোক।’
জেলা জামায়াতের আমির এম বি বাকের বলেন, ‘প্রথম আলো জাতীয় খবরের পাশাপাশি স্থানীয় খবর আরও বেশি প্রকাশ করুক, যেন সব শ্রেণির সব ধরনের গল্প মানুষের সামনে উঠে আসে। সংবাদমাধ্যম সত্য নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করলে কেউ দুর্নীতিবাজ, দখলবাজ হয়ে উঠতে পারবে না।’
মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ রিজভী জামান বলেন, ‘শিশু–কিশোর, তরুণদের জন্য প্রথম আলোর যেসব আয়োজন আছে, সেগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়। বিজ্ঞান উৎসব, গণিত উৎসব—এসব আয়োজন আমাদের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে। আমরা চাই মাগুরাতেও নিয়মিত এসব কর্মসূচি হোক।’
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যম দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে পারে। প্রথম আলো অতীতের মতো সামনেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে—এটাই চাই।’
সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত শাহেদ আক্তার বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, দেশের নানা সংকটকালীন মুহূর্তে প্রথম আলো সত্য তুলে ধরেছে। এই সাহস ধরে রাখা জরুরি। বিশেষ করে নির্বাচনী সময়ে একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা জাতিকে পথ দেখাতে পারে।’
চিকিৎসক সিমিন মজিদ আখতার বলেন, ‘প্রথম আলো সব বয়সী ও সব ধরনের পাঠকদের কথা বিবেচনা করে সংবাদ পরিবেশ করে। তাঁদের এই বৈচিত্র্য নিজেদের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করেছে। এটা অনেকের কাছে অভ্যাসের মতো হয়ে গেছে।’
সুধী সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী সিরাজ উদ্দিন, পরিবেশকর্মী আসাদুর রহমান, সাংবাদিক এইচ এন কামরুল ইসলাম, মাগুরা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক কাজী শামশুজ্জামান প্রমুখ। সমাবেশে পাঠকেরা প্রথম আলোর সংবাদ পরিবেশন, অঞ্চলের খবর, তরুণদের সম্পৃক্ততা, অনলাইন সংস্করণসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর মাগুরা প্রতিনিধি কাজী আশিক রহমান।
সমাবেশে প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘সত্য প্রকাশের পথে সব সময় বাধা আসে। সব সরকারের সময়ই চাপ থাকে। তারপরও আমরা দায়িত্ব পালন করি। গত বছরের আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও আমরা মাঠে ছিলাম। সত্য প্রকাশের জন্য প্রথম আলো দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে—এটাই আমাদের প্রেরণা।’
শওকত হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা দেশকে নতুনভাবে গড়ার কাজে পাঠকদের সঙ্গে রাখতে চাই। আপনারা পরামর্শ দিন, আমরা সেই পরামর্শ নিয়ে আরও সাহসী হয়ে এগিয়ে যাব।’