মধুমতীর ভাঙনে দিশাহারা আলফাডাঙ্গার তিনটি ইউনিয়নের নদীপাড়ের মানুষ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া, বানা ও গোপালপুর ইউনিয়নের মধুমতী নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো ভাঙনের মুখে পড়েছে। সম্প্রতি পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশতলা এলাকা
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া, বানা ও গোপালপুর ইউনিয়নের মধুমতী নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন কমছে না। এ কারণে ওই এলাকার নদীর তীরের পাঁচ শতাধিক পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে নদীপাড়ের দেড় কিলোমিটার অংশে ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা। প্রতিদিনই নদীতে বিলীন হচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষের সম্পদ। ভাঙন রোধে পাউবো সাময়িকভাবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে নদীতে। তবে তা চাহিদার তুলনায় অতি সামান্য।

ওই তিন ইউনিয়নের নদীপাড়ের বাসিন্দা হাবিব মাতুব্বর, করিম শেখ, বিদ্যালয়শিক্ষক ইউসুফ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে ভাঙন। তাঁরা বেশ আতঙ্কে আছেন।

পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এস এম মিজানুর রহমান বলেন, বর্ষার শুরু হতেই তাঁর ইউনিয়নে ভাঙন শুরু হয়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলায় ভাঙনের প্রবণতা কমে এসেছিল। কিন্তু বর্তমানে কাজ বন্ধ থাকায় আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে।

বানা ইউপির চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, নদীভাঙনের কারণে ইতিমধ্যে ২০০ বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। তার ইউনিয়নের দিঘল বানা ও আটক বানার পশ্চিম পাড় এবং রুদ্র বানার পূর্ব পাড় ভাঙনের কবলে পড়েছে।

গোপালপুর ইউপির চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের কবলে আছে বাজরা-চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এলাকায় ভাঙন থাকলেও নদী শান্ত থাকায় এর তীব্রতা কম। তবে পানি কমতে শুরু করলে কী অবস্থা হবে, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন।

ভাঙনের মুখে আছে বাজরা–চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদালয়। ১৯৯৫ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টিতে ২০১২ সালে নতুন একটি ভবন করা হয়। বিদ্যালয়ে ৬০ জন শিক্ষার্থীতে পড়ানোর জন্য শিক্ষক আছেন পাঁচজন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা বেগম বলেন, মধুমতীর ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়ের টয়লেটটি পশ্চিম দিকে কাত হয়ে পড়েছে। সেটি তালা দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে ওই টয়লেট ভেঙে পড়লে বিদ্যালয়ের মূল ভবনও ভেঙে যাবে। তিনি বলেন, ‘এ ভাঙনের আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা কমিয়ে দিয়েছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে খালের আকার ধারণ করে বিদ্যালয়ের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিপদের মধ্যে আছি।’

পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশতলা এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন আহমেদ (৪৬) বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই দেখছি মধুমতী নদী ভাঙছে। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। কয়েকবার আমরা হারিয়েছি ভিটেমাটি ও ফসলি জমি।’

গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলাসুর এলাকার বাসিন্দা ফেরত মাতব্বর (৫৪) বলেন, ওই গ্রামে বড় একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে প্রকল্পের ঘরগুলোর ২০০ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। তিনি আরও বলেন, ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তাঁরা। কাজ না হওয়া পর্যন্ত আর কিছুই বিশ্বাস করেন না।

ভাঙনের মুখে আছে আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজরা সরকারি প্রাথমিক বিদালয়
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে পাউবো। তবে সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় কম। স্থানীয় মানুষের দাবি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের।

পাউবোর ফরিদপুর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী সন্তোষ কর্মকার বলেন, আলফাডাঙ্গার তিনটি ইউনিয়নে ভাঙন রোধে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তারপরও ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কাজ বন্ধ হয়নি, তবে অনুমতি পেতে বিলম্ব হওয়ায় কাজ চলছে ঢিমেতালে।

সন্তোষ কর্মকার বলেন, যেকোনো মূল্যে বাজরা-চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হতে দেবে না পাউবো। পাশাপাশি গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতরাসুর এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর ভাঙন রোধে কাজ করছে পাউবো।

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী সন্তোষ কর্মকার আরও বলেন, সম্প্রতি একনেকে এ বিষয়ে ৪৮১ কোটি ১০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সাত কিলোমিটার অংশ মধুমতী নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য স্থায়ী কাজ ও ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার অংশ ড্রেজিং করা হবে। এ ছাড়া মধুখালী থেকে আলফাডাঙ্গার ভাঙনকবলিত আটটি জায়গায় সাত কিলোমিটার নদীর পাড়ের অংশ সিসি ব্লক স্থাপন করে স্থায়ী কাজ করা হবে। এই কাজের নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। এরপর দরপত্র আহ্বান করা হবে।