ঠিকাদারি ছেড়ে ড্রাগন চাষ করে মাসে আয় আড়াই লাখ টাকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বুড্ডা গ্রামের হাবিবুর রহমান তাঁর গ্রামে তিতাস নদের পারে গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফলের বাগান। নিজেই বাগানের যত্ন করেন তিনিছবি: প্রথম আলো

হাবিবুর রহমানের (৪২) পেশা ছিল ঠিকাদারি। তবে জীবনকে নতুনভাবে দেখার ভাবনা থেকে বছর তিনেক আগে তিনি কৃষিকাজে মন দেন। গড়ে তোলেন বিদেশি ফল ড্রাগনের বিশাল এক বাগান। সেই বাগানের আয় এখন মাসে আড়াই লাখ টাকা।

হাবিবুরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বুড্ডা গ্রামে। সরাইলে প্রথমবারের মতো ড্রাগন ফল চাষ করে তিনি এলাকায় রীতিমতো চমক সৃষ্টি করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার হাবিবুরের ড্রাগন বাগানে দেখতে যান এই প্রতিবেদক। হাবিবুর বলেন, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বুড্ডা গ্রামে তিতাস নদের পারে ৩ একর পতিত জমি ১০ বছরের জন্য ৭ লাখ টাকায় ভাড়া নেন তিনি। এর মধ্যে ১ দশমিক ৮০ একর জায়গায় ১ হাজার ৫০০টি খুঁটির পাশে তিনি লাল, সাদা ও গোলাপি রঙের ৬ হাজার ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করেন। প্রতিটি চারা কিনেছিলেন ৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে। এতে তাঁর মোট ব্যয় হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। চারা রোপণের ১ বছর পর থেকেই ফলন শুরু হয়। তবে এ বছর থেকে পূর্ণ মাত্রায় ফলন শুরু হয়েছে। প্রতি মাসে তিনি ৮০০ থেকে ১ হাজার কেজি ফল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

হাবিবুর বলেন, প্রতি মাসে ড্রাগন গাছের চারা বিক্রি করে আয় করছেন ২৫-৩০ হাজার টাকা। একজন কর্মচারী ও অন্য সব মিলিয়ে তাঁর মাসে খরচ হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। তিনি নিজেই বাগানের যত্ন করেন। বাগানের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে জৈব সার উৎপাদনও করছেন। ড্রাগন গাছগুলো ২৫ থেকে ৩০ বছর বাঁচে। তাই তত দিন পর্যন্ত ফল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। গত বছর বাগানে বর্ষার পানি উঠেছিল, তাতে গাছের কোনো ক্ষতি হয়নি।

প্রতি মাসে হাবিবুর রহমান ৮০০ থেকে ১০০০ কেজি ফল ২৫০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন
ছবি: প্রথম আলো

ড্রাগন ফলের চাষ দেখতে এবং খোঁজখবর নিতে নানা শ্রেণি–পেশার লোক বুড্ডা গ্রামে আসছেন। উপজেলা সদরের বাসিন্দা ও শিক্ষক শামসুল আলম (৫৮) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কয়েক বছর আগে ড্রাগন ফলের নাম শুনেছি। কোনো দিন এ ফলের বাগান দেখিনি। আকর্ষণীয় এই বাগান দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।’

হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামে ঠিকাদারি ব্যবসা করতাম। সেখানে লাভজনক এই ফলের চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। এ বাগানের পেছনে আমার প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন প্রতি বছর আমার আয় হবে ১৫-১৬ লাখ টাকা। এ বছর এখন পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এ ছাড়া বাগানের ভেতরের ফাঁকে ফাঁকে এখন আমি সাথি ফসল হিসেবে তরমুজ এবং পাশে লাউ ও মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে শুরু করেছি। গরু এবং ছাগলও লালন-পালন করছি। আশা করি, এসব থেকে বছরে কয়েক লাখ লাখ আয় করতে পারব।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মানবদেহের জন্য উপকারী ড্রাগন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফল ছিল। পরে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান ও অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপকভাবে উৎপাদন শুরু হয়। দুই দশক আগে বাংলাদেশে এ ফল আমদারি করা হতো। তবে কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ফলের চাষ হতে দেখা যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. একরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সরাইলে ড্রাগন ফলের একমাত্র বাগান। আমি ওই বাগান পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি। আমার অফিসের লোকজন মাঝেমধ্যে সেখানে যান। কিছু দিনের মধ্যে ওই বাগানের মালিককে বিনা মূল্যে জৈব সার উৎপাদনের কিট দেওয়া হবে। এতে তাঁর আর জৈব সার কিনতে হবে না।’