শোকজ, জালিয়াতি, মামলাসহ বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যা হচ্ছে

বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম (বাঁয়ে) এবং বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন (ডানে)
ছবি: সংগৃহীত

বরিশালে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি শোকজের পর এবার পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে আদালতে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে নালিশি মামলা হয়েছে। আজ বুধবার বরিশালের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলার বিশারকান্দি এলাকার বাসিন্দা উত্তম কুমার দাস বাদী হয়ে নালিশি মামলার আবেদন করেন। বিচারক সুমাইয়া রিজভী মৌরি আবেদনটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। মামলার বাদী উত্তম কুমার দাস জেলার নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। তিনি বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুন

মামলায় বিবাদীরা হলেন বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত লাল কুণ্ডু; সহসভাপতি মোস্তফা সরদার; উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হুদা, মামুনুর রশিদ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন। তাঁরা সবাই বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩ অক্টোবর ১৭টি অভিযোগ তুলে সংসদ সদস্য শাহে আলমকে শোকজ (কারণ দর্শানো) নোটিশ দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. গোলাম ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেওয়ায় গত মঙ্গলবার দুই নেতাকে পাল্টা শোকজ নোটিশ দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পর ‘এমপি শাহে আলমের বিরুদ্ধে প্রকাশিত ভুয়া সংবাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ’ শিরোনামে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতারা গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে মামলার বাদী উত্তম কুমার দাসেরও সই আছে। কিন্তু তিনি নালিশি মামলায় দাবি করেছেন, তিনিসহ মোট পাঁচ নেতা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সই করেননি। এরপরও তাঁদের নাম যুক্ত করা হয়েছে, যা জালিয়াতি। ওই পাঁচ নেতার মধ্যে একজনকে বাদী এবং বাকিদের মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ; কোষাধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম এবং সদস্য সেলিম সরদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খাঁ ও মিজানুর রহমান।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মামুন অর রশীদ বলেন, বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির কিছু সদস্যের সই জাল করে একটা প্রতিবাদ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আদালতে নালিশি মামলার অভিযোগ করা হয়। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

যেসব অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, সব মিথ্যা দাবি করে সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম বলেন, কোনো ধরনের সভা না করে মনগড়া ও অসত্য অভিযোগ তুলে তাঁকে নোটিশ দেওয়া হয়। যার কোনো ভিত্তি নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে তাঁকে বিতর্কিত করতে এমন কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। সংসদ সদস্যের অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে গুটিকয় নেতা কাজকর্মের সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে তাঁরা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে একতরফা নোটিশ দিয়েছেন।

তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সংসদ সদস্যকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি কিছু প্রশ্নের জবাব দেন আর কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি। এ জন্য সভায় তাঁর উপস্থিতিতেই কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।