রাজশাহীতে মুক্তিযুদ্ধ থিমের শখের ভাস্কর্য ভাঙারির দোকানে

রাজশাহীতে মুক্তিযুদ্ধের থিমে এক শিল্পীর বানানো শখের ভাস্কর্য এখন ভাঙারির দোকানে ঠাঁই পেয়েছে। নগরের বিনোদপুর বাজারেছবি: প্রথম আলো

দুজন মুক্তিযোদ্ধা। সামনের জন এক হাতে মুক্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিচ্ছেন এবং আরেক হাতে বন্দুক তাক করে আছেন। আর পেছনের জন দুই হাতে রাইফেল উঁচিয়ে ধরেছেন। স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যটির জায়গা হয়েছে একটি ভাঙারির দোকানে।

শখ করে রাজশাহীর একজন শিল্পী এটি নির্মাণ করেছিলেন। ইচ্ছা ছিল পছন্দের কাউকে উপহার দেবেন অথবা বিক্রি করবেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর শিল্পী ভাস্কর্যটি নিয়ে বিপাকে পড়েন। বাধ্য হয়ে ৫০ হাজার টাকায় নির্মাণ করা ভাস্কর্যটি মাত্র ৪০০ টাকায় একজন ভাঙারিওয়ালার কাছে বিক্রি করে দেন। ভাঙারিওয়ালা নগরের বিনোদপুরে রাস্তার ধারে একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ভাস্কর্যটি দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।

এই ভাঙারিওয়ালার নাম মিলন আলী। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিনোদপুর বাজারে তাঁর দোকানের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভাস্কর্যটিকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে রেখে দেওয়া হয়েছে। কোথা থেকে ভাস্কর্যটি কিনেছেন, তা জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে স্বীকার করেন, নগরের বুধপাড়া এলাকার একজন শিক্ষক তাঁর কাছে এটি বিক্রি করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিলে শিল্পীকে পাওয়া যায়। তবে তিনি নাম–পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। এই শিল্পী বলেন, তাঁর একটি স্টুডিও ছিল। চাকরিজীবন শেষে রাজশাহী ছেড়ে চলে যাবেন। ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। ফ্ল্যাটটির দাম মেটানোর জন্য তিনি স্টুডিওটি বিক্রি করে দিয়েছেন। যাঁরা স্টুডিওটি কিনেছেন, তাঁরা ভাঙা শুরু করেছেন। সেখানেই ছিল ভাস্কর্যটি। এটি নির্মাণ করতে তাঁর ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখনো কিছু কাজ বাকি ছিল। ভাস্কর্যটি স্টুডিওর বাইরে রাখা ছিল। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হয়ে গেল। ‘কে এখানে মূর্তি রেখেছে’—এমন সব প্রশ্নের সম্মুখীন হন তিনি। তখন ভাস্কর্যটি ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উচ্চতায় বেশি হওয়ার কারণে ঘরের ভেতরে ঢোকাতে পারেননি। পরে ভাঙারিওয়ালাকে ডেকে মাত্র ৪০০ টাকায় এটি তিনি বিক্রি করে দেন।

এই শিল্পী বলেন, কেউ যদি ভাস্কর্যটি কোথাও স্থাপন করতে চান, তাহলে তিনি নিজ খরচে গিয়ে স্থাপন করে দিয়ে আসবেন। যদি কোনো সংশোধন করার প্রয়োজন মনে হয়, তিনি নিজ খরচেই সেটি করে দিবেন। ভাঙারিওয়ালা ভাস্কর্যটিকে না ভেঙে যদি শিল্পকর্ম হিসেবে বিক্রি করতে পারে, তাতে তিনি খুশি হবেন।