গাজীপুরে ঝুট ব্যবসার দখল নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, আহত ২

গাজীপুর জেলার মানচিত্র

গাজীপুরে তৈরি পোশাকের একটি কারখানার ঝুট ব্যবসা দখল নিতে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েকটি গুলির আওয়াজও শোনা গেছে। হামলায় এক ঝুট ব্যবসায়ীর স্ত্রীসহ দুজন আহত হয়েছেন। গুলির ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর আদাবৈ পেয়ারাবাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত দুজন হলেন গাজীপুরের আদাবৈ এলাকার বাসিন্দা ঝুট ব্যবসায়ী মোস্তফা কামালের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৬০) ও ইজ্জত আলীর ছেলে শাহাদত হোসেন (৩৫), তিনি সম্পর্কে মোস্তফার ভাগনে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন আদাবৈ এলাকায় নেক্সট এক্সপোর্ট জোন লিমিটেড নামের পোশাক তৈরির একটি কারখানা রয়েছে। ওই কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুট ব্যবসা করে আসছেন স্থানীয় মোস্তফা কামাল নামের আওয়ামী লীগের এক নেতা। আজ দুপুরে ওই কারখানার ঝুট মালামাল বের করতে গেলে একদল যুবক তাঁদের বাধা দেন। ঝুট ব্যবসা দখলে নিতে তাঁরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। আতঙ্ক ছড়াতে পরপর কয়েকটি গুলি ছোড়েন।

এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ৯ জন যুবক হাতে চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, দেশীয় অস্ত্রসহ দৌড়ে যাচ্ছেন ঝুট ব্যবসায়ী মোস্তফার বাড়ির দিকে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ওই বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে মারছিলেন। এ সময় হামলাকারীরা বলছিলেন, ‘তোদেরকে মেরে ফেলব।’ পরে বাড়ির ফটকের সামনে মোস্তফার স্ত্রী ফাতেমা ও শাহাদতকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাড়ির সামনে গুলির একটি খোসাও পড়ে থাকতে দেখা যায় ভিডিওতে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায় করে ৮ থেকে ১০ জন যুবকের একদল এসে মোস্তফার বাড়িতে আক্রমণ চালান। এ সময় শাহাদতকে সামনে পেয়ে মারধর করা হয়। পরে তাঁরা এসে বাড়িঘরেও ভাঙচুর করেন। তবে এ সময় স্থানীয় রাহাত ও রফিকের হাতে পিস্তল দেখা যায়। সেটি দিয়ে তাঁরা কয়েকটি গুলি ছোড়েন। শাহাদতকে উদ্ধার করে গাজীপুরেই শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

ঝুট ব্যবসায়ী মোস্তফা কামালের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশেই নেক্সট এক্সপোর্ট জোন লিমিটেড নামের কারখানা। কারখানা নির্মাণ করার সময় আমাদের সঙ্গে চুক্তি হয়, কারখানার ঝুট ব্যবসা আমার বাবা করবেন। সেই থেকেই ব্যবসাটি আমরা করে যাচ্ছি।’

স্থানীয় কাজী শাহিন ওরফে ব্ল্যাক শাহিন ও বিপ্লব ব্যবসাটির দখল নিতে যাচ্ছিলেন উল্লেখ করে ইয়াছিন বলেন, ‘শাহিন ও বিপ্লবের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন যুবক শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত আমাদের বাড়ির আশপাশে ওত পেতে থাকে। দুপুর ১২টার দিকে তারা আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে তারা চায়নিজ কুড়াল, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।’

হামলার ঘটনাটি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাপক আবদুল জলিল। তিনি বলেন, ‘শুনেছি ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও শুনেছি। কিন্তু এখানে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। যেহেতু ঘটনাটি কারখানার বাইরে ঘটেছে।’

এ বিষয়ে গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম বলেন, ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। একজন আহত হয়েছেন। তবে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কি না, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।