জয়পুরহাটে আগের ইউরিয়া সার বর্তমান দামে বিক্রির অভিযোগ

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে একটি খুচরা সার ব্যবসায়ীর দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
ছবি: প্রথম আলো

জয়পুরহাটে খুচরা সার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আগের মজুত করা ইউরিয়া সার বর্তমান দামে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে প্রতি বস্তা ইউরিয়া সারে কৃষকদের তিন শ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। এদিকে আগের সার বর্তমান দামে বিক্রি করায় জেলার আক্কেলপুর উপজেলার পাঁচ খুচরা ব্যবসায়ীকে ৭৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কৃষকদের অভিযোগ, বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) সারের ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে আগের দরের বিপুল পরিমাণ ইউরিয়া সার মজুত আছে। মজুত করা সার আড়াল করতে ডিলারদের কেউ কেউ এখন গুদাম থেকে সার তুলছেন।

আরও পড়ুন

জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১ আগস্ট পর্যন্ত জেলার বিসিআইসির ডিলারদের কাছে মোট ১ হাজার ৭৬৮ দশমিক ১৫ মেট্রিক টন ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ১৭৯ দশমিক ৯ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার মজুত আছে। এই সার ১ আগস্টের আগে ডিলাররা তুলেছেন। আগে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) সারের দাম ছিল ৮০০ টাকা। ১ আগস্ট থেকে প্রতি বস্তা সার ৩০০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ১০০ টাকা করেছে সরকার।

জয়পুরহাট বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, জয়পুরহাটে ৫৮ ও নওগাঁর ধামইরহাটের ২৩ জনসহ মোট ৮১ জন ডিলার আছেন। আজ বুধবার ১৪ জন ডিলার ২০০ মেট্রিক টন সার উত্তোলন করেছেন। বাফার গুদামে এখন ২৩ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার মজুত আছে।

কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানে অনেক ইউরিয়া সার মজুত আছে। সেই সার বর্তমান দাম প্রতি বস্তা ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন তাঁরা। এর বাইরে ব্যবসায়ীরা সার বিক্রি করছেন না।

আক্কেলপুরের লক্ষ্মীভিটা গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রায়কালীর চন্দনদীঘি বাজারের খুচরা সার ব্যবসায়ী আসলামের দোকান থেকে তিনি ১১ বস্তা সার কিনেছেন। এর মধ্যে এমওপি তিন বস্তা, ড্যাপ চার বস্তা, ইউরিয়া তিন বস্তা ও ফসফেট এক বস্তা। এমওপি ১ হাজার ৩০০, ড্যাপ ৮০০, ইউরিয়া ১ হাজার ১০০ টাকা দামে নিয়েছেন।

কালাইয়ের মাদইল গ্রামের আশরাফ আলী বলেন, তিনি ১ হাজার ১০০ টাকায় ইউরিয়া সার কিনেছেন। আগের মজুত করা সার আগের দামে বিক্রির করার কথা থাকলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা বর্তমান দামে বিক্রি করছেন। আগের দামে সার নিতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সার দিচ্ছেন না।

অভিযোগের বিষয়ে চন্দনদীঘি বাজারের সার ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জানতাম না যে আগের মজুত করা সার বর্তমান দামে বিক্রি করা যাবে না। বিষয়টি কৃষি অফিসের লোক আমাকে আগে জানাননি। তাই আমি কয়েকজন কৃষকের কাছে বর্তমান দামে সার বিক্রি করেছি। এটা আমার ভুল হয়েছে।’

আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, আজ থেকে উপজেলার ডিলারদের ঘরে নতুন মূল্যের সার ঢুকছে। এর আগে যাঁদের সার মজুত ছিল, সেগুলো আগের দামে বিক্রি করতে হবে। কেউ যদি বেশি দামে বিক্রি করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষি কার্যালয়ের লোকজন সব সময় উপজেলার প্রতিটি সারের দোকান ও ডিলারদের মজুত যাচাই করে দেখবেন।

এদিকে আগের মজুত করা সার বর্তমান দামে বিক্রি করায় আক্কেলপুরের চন্দনদীঘি, মোহনপুর ও তিলকপুর বাজারের পাঁচ খুচরা ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম হাবিবুল হাসান ওই বাজারগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে ৭৭ হাজার টাকা জরিমানা করেন।