গাজীপুরে দুদকের গণশুনানিতে ২৩ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৬৫ অভিযোগ
গাজীপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে গাজীপুর সদর ভূমি কার্যালয় নিয়ে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওই ভূমি কার্যালয়ে ভূমির নামজারি করতে হলে ১২ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে কর্মকর্তারা নানাভাবে হয়রানি করেন। যাঁরা চাহিদা মতো টাকা দেন তাঁদের নামজারি সময়মতো হয়ে যায়। আর যাঁরা টাকা দেন না তাঁদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
দুদকের গণশুনানিতে ছিল অভিযোগের পাহাড়। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে হয়রানি, দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ নেওয়াসহ নানা অভিযোগের তোলেন সেবাগ্রহীতারা। আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত গাজীপুরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে চলে দুদকের ওই গণশুনানি। সেখানে ২৩টি সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে ১৬৫টি অভিযোগ করেন নগরবাসী। এর মধ্যে কিছু অভিযোগ সুনির্দিষ্ট, আবার কিছু ছিল ঢালাও অভিযোগ।
গণশুনানিতে ১৬৫টি অভিযোগের মধ্যে শুনানি হয়েছে ৮৬টির। চারটি অভিযোগ অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি অভিযোগগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়। অভিযোগগুলো প্রাথমিক যাচাই–বাছাই শেষে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গণশুনানিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সামসুদ্দিন অভিযোগ করেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে। তিনি বলেন, ওই হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না। চিকিৎসকেরা ব্যবস্থাপত্রে যেই ওষুধ লেখেন, তার সব হাসপাতালে পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে কিনতে হয়। হাসপাতালটি দালাল চক্রের অভয়াশ্রম হয়ে আছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো হলো গাজীপুরের ভূমি কার্যালয়, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়, পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, বিআরটি, কৃষি ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, সদর সাবরেজিস্টার কার্যালয়, জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, বন বিভাগ, শিক্ষা অফিস, গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, সমাজসেবা অধিদপ্তর, প্রবাসীকল্যাণ অধিদপ্তর, জীবন বিমা করপোরেশন, কারা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ওঠে গাজীপুরের ভূমি কার্যালয়ের বিরুদ্ধে ২৪টি।
গণশুনানিতে দুদকের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। আমাদের সংবিধানেরও মেসেজটা এমন যে রাষ্ট্র এমন অবস্থার সৃষ্টি করবে, যেখানে অনুপার্জিত অর্থ কেউ যেন ভোগ করতে না পারে। সে লক্ষ্যেই দুদক সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গণশুনানিতে সেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো অনুসন্ধান করে দেখা হবে। গুরুতর অভিযাগগুলো আমলে নিয়ে দুদকের আইন ও নিয়মানুযায়ী পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করা হবে এবং কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাহবুব হোসেন আরও বলেন, ‘দুর্নীতির কোথাও কোনো সুযোগ নেই। যে যেই ধর্মেরই হোন না কেন, কেউ কিন্তু দুর্নীতিকে সমর্থন করে না। কোনো অভিযোগের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দেশের জনগণ যত দিন সেবাটি না পাবে তত দিন দুদক আপনাদের সঙ্গেই আছে, থাকবে। দুদক ভালোর সঙ্গে থাকবে, খারাপের সঙ্গে থাকবে না।’
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, গণশুনানিতে অংশ নিয়ে অভিযোগ ওঠা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়েছে। আগামী বুধবার সেবাপ্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হবে। সেখানে গণশুনানিতে ওঠা অভিযোগের বিষয় নিয়ে উপস্থাপন ও সমাধান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে গণশুনানি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান, দুদকের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মোরশেদ আলম, দুদকের গাজীপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক মোজাহার আলী সরদার, গাজীপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এম এ বারী, সাধারণ সম্পাদক মুকুল কুমার মল্লিকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা।